অনুরুপ ভোরের প্রথম আলোতেই ঢাকায় এসে পৌঁছায়

 


অনুরুপ ভোরের প্রথম আলোতেই ঢাকায় এসে পৌঁছায়


। বাসায় ফিরে গুছানোরও সময় পায়নি, সরাসরি হাসপাতালে ছুটে যায়। কারণ আগের রাতে মিলাতের ফোন পেয়েছিল সে। ফোনের ওপারে মিলাতের কাঁপা কণ্ঠে কান্না অনুরুপকে গভীর চিন্তায় ফেলে দেয়। অনেক চেষ্টা করে মিলাতকে শান্ত করার পর জানতে পারে, ওর বাবার হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে, তাই দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।অনুরুপ ওকে আশ্বস্ত করে বলল সকালেই গিয়ে ওর বাবার অবস্থা জানাবে।


আজ অনেক সকালেই অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলো রেভান।তবে সে আগে অফিসে গেলো না।মিলাতের ফুপুর বাড়ির সামনে এসে মিলাতকে ফোন করতেই দেখলো ওর ফোন বন্ধ।কয়েকবার ফোন করার পরও যখন বন্ধ বলছে তখন রেভান ভাবলো বাসায় নক করবে না-কি ফিরে যাবে!দোলাচালে ভুগতে ভুগতে রেভান দরজায় টোকা দিয়েই ফেললো।খানিকক্ষণ পর দরজা খুলতেই দেখা গেল এক মিষ্টি চেহারার মেয়ে। চোখেমুখে তখনও ঘুমের ছাপ। বোধহয় কিছুক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠেছে। ওর এলোমেলো চুল আর একটু আনমনা ভঙ্গিমা মুহূর্তেই চোখে পড়ল। মেয়েটির চেহারায় এক ধরনের কোমলতা আর মাধুর্যতা মিশে ছিল।রেভান মেয়েটিকে চিনতে পারলো ওইদিন মিলাতের সাথে এই মেয়েটিই ছিলো।কিছুটা ইতস্তত কন্ঠেই ও বলল,'মিলাত আছে বাসায়?'

'কে আপনি?'নিরু জবাব না দিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে প্রশ্নটি করলো।

'আমি মিলাতের বন্ধু।'

নিরু রেভানকে একবার জহুরি চোখে চেয়ে বলল,'আপু আর আমার আম্মু আজ সকালে ঢাকা গেছেন।আপুর আব্বু মানে মামা হঠাৎই অসুস্থ হয়ে গেছেন।কাল রাতে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে।'

রেভান আফসোসের স্বরে বলল,'ইশ!এরপর কোনো খবর পাওয়া গেছে?'

'না,ওরা এখনও পৌঁছায় নি।পৌঁছে জানাবে আমাকে।'

'আপনাকে যদি মিলাত কল করে তাহলে দয়া করে বলবেন অনন্ত আমাকেও যেন একটা কল দেয়।'

'আচ্ছা।'

'ধন্যবাদ,আসি।'

রেভান চলে গেলো সেখান থেকে তবে নিরু একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো।মিলাত আপুর এখানে এমন কোনো বন্ধু আছে সেটা তো জানতো না!


মিলাত আর রুজিনা বেগম বেলা বারোটায় পৌঁছালো ঢাকায়।হাসপাতালে পৌঁছাতে লাগলো আধঘন্টা।মিলাত এসেই মা'র হাত ধরে অসহায় গলায় বলল,'মা,বাবা কেমন আছে?'

মিনারা বেগম আশ্বস্ত স্বরে বললেন,'এখন ঠিকাছে।আরেকটু দেরি করলে একটা অঘটন ঘটে যেতো।'

'কিভাবে হলো মা?'

'চৈতি ফোন করেছিলো।ওর সাথে কথা বলার পর থেকেই শরীর খারাপ হচ্ছিলো একটু একটু করে।'

'বাবা ফোন কেন রিসিভ করলো?ওর স্বভাবই তো মানুষকে কষ্ট দেওয়া।'

মিনারা বেগম মলিন কন্ঠে বললেন,'আমার পেটের কলঙ্ক।ওর জন্য তোর জীবনটা ছারখার হয়ে গেছে।ওকে যদি জন্মের পরই নুন খাইয়ে মে'রে ফেলতাম তাহলে আজ এত অশান্তি হতো না।'বলতে বলতেই মিনারা বেগম কেঁদে ফেললেন।মিলাত মা'কে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,'ছিঃ মা এসব কি বলছো?আমার জীবন ঠিকই আছে।তুমি নিজের ওপর দোষ নিও না।শান্ত হও।আর বাবার খেয়াল রাখো।'

মিনারা বেগম তবুও কেঁদেই যাচ্ছেন।মিলাত মা'কে কোনোরকম শান্ত করে বাবাকে দেখতে গেলো।রুজিনা বেগম আগেই এসেছেন ভাইয়ের কাছে।হারুন সাহেব মিলাতকে দেখে বলল,'তোর বেড়ানো শেষ?এত তাড়াতাড়ি চলে এলি কেন?'

রুজিনা বেগম মুখে ঝামটা মেরে বললেন,'ভাই তোমার ছোটো মেয়ে তো তোমার কথা শুনে পারলে কালরাতেই উড়ে চলে আসে।ভাগ্যিস ডানা ছিলো না।'

মিলাত আর হারুন সাহেন দু'জনেই হেসে ফেললো।হাসতে হাসতেই হারুন সাহেব বললেন,'আমার মেয়ে তো খবর শুনেই চলে এসেছে আর তুই বোন হয়ে বছরে একবারও আসিস না।'

'আমার তো ছেলে,মেয়ে আছে দু'টো।তোমার মেয়ের হোক তখন দেখবো কিভাবে আসে।'

'আমার মেয়ের দশটা হলেও আসবে।'

মিলাত দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাই-বোনের ঝগড়া দেখছিলো।বাইরে থেকে মিনারা বেগম এসে হাঁক ছেড়ে বললেন,'এবার চুপ করো সবাই।'

মিনারা বেগমের ডাকে ভাইবোন দু'জনেই চুপ হলো।তিনি কপট রাগের গলায় বললেন,'দু'টিতে এখনও বাচ্চাই রয়ে গেছে।এই বয়সে এসেও ঝগড়াঝাটি লেগেই আছে।এই রুজিনা তুই আয় আমার সাথে।মিলাতে থাকুক এখানে।আমরা আসার পর ও যাবে।'

হারুন সাহেব বললেন,'আমি থাকতে পারব।মিলাতকেও নিয়ে যাও।মেয়েটা এতদূর থেকে এলো!'

'আহা,বাবা!তুমি রেস্ট নাও।আমি ঠিক আছি।মা,ফুপু তোমরা বেরিয়ে পড়ো।'

মিলাত মা এবং ফুপুকে হাসপাতালের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যখন আবার ফিরছিলো তখন অনুরুপের সাথে দেখা হয়ে গেলো।অনুরুপ ওকে দেখে স্বভাবসুলভ হেসে বলল,'আপনার বাবা ঠিক আছেন।এত অস্থির হবেন না।'

'অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।বাসায় গিয়েছিলেন?'

'না,ঢাকায় পৌঁছেই হাসপাতালে চলে এসেছি।'

'ইশ!আমার জন্য এত হয়রানি হতো হলো আপনার।'

'আরে না,এটা আমার দায়িত্ব।আমি অবশ্য দুপুরের শিফট করতাম তবে এখন সকালের শিফট করেছি।আর একঘন্টা পরই চলে যাব বাসায়।'

'ও আচ্ছা।আমিও এখনো বাসায় যাই নি।মা আর ফুপু গেছেন।বাবার জন্য খাবার নিয়ে আসতে।তারা আসলে আমিও যাবো।'

'বাহ!বেশ ভালো।...'আরও কিছু বলার আগেই অনুরূপের ডাক এলো।অনুরূপ মিলাতকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।


দুপুরের খাবার খাওয়া শেষে চৈতি আর সাইফুল রুমে এলো।এখন ওরা ঘুরতে বের হবে।তৈরি হতে হতে চৈতি হঠাৎ করেই বলে উঠলো,'সাইফুল আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব।'

এমন কথা শুনে সাইফুল মুহুর্তের জন্য বাকরুদ্ধ হলেও পরক্ষণেই হাসতে হাসতে বলল,'এত সিরিয়াস ভঙ্গিতে মজা করো যেন সত্যি বলছো!'

চৈতি হাসলো।আর মনে মনে বলল'সঠিক সময়ে বুঝতে কোনটা সিরিয়াস আর কোনটা মজা!'


নাইমার মন খারাপ হলো।ছেলে পক্ষ না করেছে।আচ্ছা ও কি দেখতে এতই খারাপ?কেন না করলো?কারণটাও বলে নি।যদি কখনো ছেলেটার মুখোমুখি হয় তাহলে ও জিজ্ঞেস করবে কেন না করেছিলো তাকে?কি কমতি তার?এসব ভাবনার মাঝেই নাইমার মা সালেহা বেগম এসে বললেন,'তোর মেজো খালার মেয়ের বিয়ে।কাল ঢাকা যাব আমরা।তৈরি থাকিস।'

নাইমা হ্যাঁ,না কিছুই বলল না।চুপচাপ অন্যদিকে চেয়ে রইলো।


মিনারা বেগম আর রুজিনা বেগম ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ফিরে এলেন।তারা আসতেই মিলাত বের হলো হাসপাতাল থেকে।একই সময়ে অনুরুপও বের হলে।ওকে দেখে অনুরুপ বলল,'আরে,বাহ!আবার দেখা।'

মিলাত হাসলো।অনুরুপ ফের বলল,'চলুন,নামিয়ে দেই।'

'যেতে পারব আমি।'

'আমি জানি,তবুও চলুন।আমার ভালো লাগবে।'

'আচ্ছা,চলুন তবে।'

মিলাত আর না করলো না।


চলবে.......

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم