শীত বাড়লে জামাইর আ*দর আরও বেশি বাইড়া যায়

 'বিয়ার পর কী হয় জানিস? শীত বাড়লে জামাইর আ*দর আরও বেশি বাইড়া যায়


। ডেইলি গো"সল ফরজ কইরা ছাড়বো, তখন কী করবি? তখন তো ভোরে এই ঠান্ডা পানি দিয়াই তোর গোসল করা লাগবো, লাগবো না?'


লিপি কাঁথার ভেতর থেকে মুখ বের করে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে নিয়ে বলে,


- 'ভাবি এই সাত-সকালে আমার গোসল নিয়া পড়লা কেন? যখন ফরজ হইব তখন আমি আমারটা দেখবো। এখন তোমার নিজের ফরজ আদায় করো গিয়া।'


- 'আমার আজকে ফরজ হয়নি।'


- 'কেন আজকে তো অনেক শীত।'


ভাবি ফিক করে হেঁসে লিপির কাঁথা টান দিয়ে সরিয়ে বললেন,


- 'আইজ আমি টাইট হইয়া রইছিলাম। এগুলো তোর জানা লাগবো না। তাড়াতাড়ি গিয়া গোসল কর।'


- 'কিন্তু কেন?'


- 'এহ এমন ভাব দেখাইতেছিস যেন কিচ্ছু জানিস না।'


লিপি বিছানায় উঠে বসে হাই তুলে গা মোড়া দিয়ে বললো,


- 'আমি আসলেই কিচ্ছু জানি না ভাবি।'


- 'কেন তোর বিয়ার আলাপ আইছে জানিস না?'


- 'তা তো জানি, কিন্তু এই ভোরবেলায় কী হইছে?'


- 'জামাই দেখতে আইব। তোর জামাই তো আবার মাস্টারমশাই। তাই স্কুলে যাওয়ার আগে এদিকে তোরে দেইখা যাইব।'


- 'আশ্চর্য বিয়ের আগেই এতো আমার জামাই জামাই করছো কেন ভাবি? আর এই লোক এতো অদ্ভুত কেন? কনে দেখতে আসবে, এটার জন্যও ছুটি নেয়া যায় না? এই ভোরবেলাই আসতে হইব। বুঝলাম না, এতো গুরুত্ব কম!' 


- 'বিকালে স্কুল ছুটির পর না-কি টিউশনি করায়। তাই সকালেই তোরে দেইখা বিয়ার ডেট ফেইলা যাইব।'


- 'এতো তাড়াহুড়া কেন?'


- 'এসব তোর বুঝা লাগবো না। তোর মা-মামী বলে দিছেন তাড়াতাড়ি গোসল করাইয়া রেডি করে দিতে।'


লিপি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। দেরি করলে মামী এসে গালাগাল শুরু করতে পারেন। এবাড়িতে এখন তার একমাত্র আপনজন এই লুবনা ভাবি। মামাতো ভাই সুজনের বউ। বিয়ে হয়েছে তাদের বছর চারেক আগে। একটা পুত্র সন্তান আছে। লিপির বিয়ে নিয়ে এখন তারা সকলেই বেশ চিন্তিত। মামা-মামীর মাথা খারাপ হবার জোগাড়। প্রতিটি বিয়ের আলাপ তাকে দেখা পর্যন্তই আগায়। দেখে আর এমুখো হয় না। সে দেখতে কি খারাপ? লিপি প্রায়ই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে, ভালোই লাগে। একটা গোলগাল মুখ। মাঝে মাঝে শ্যামলা লাগে, আবার প্রায়ই মনে হয় ফরসা। গালে অল্প কিছু ব্রণের দাগ আছে৷ লুবনা ভাবির কাছে এর চিকিৎসা একটাই। বিয়ে। বিয়ের পর বরের চু*মু খেলে না-কি এসব ব্রণ-ফ্রন আর থাকবে না৷ কথাটা বলেই উনি ফিক করে হাসেন। লিপি তখন কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে দাঁত কটমট করে তাকায়। কখনও পিঠে কয়েকটা কিল-ঘুসি বসিয়ে দেয়। 


লুবনা ভাবির কথা অনুযায়ী লিপি ভীষণ সুন্দরী। যে ছেলে পাবে তার জীবন ধন্য। কিন্তু ওই ধন্য মানুষটিকে ওর মামা-মামী হন্যে হয়ে খুঁজেও পাচ্ছেন না৷ বহু আলাপ আনা হয়। তাকে দেখে ফেলে চলে যায়। ডি*ভোর্সি মায়ের নানাবাড়িতে বড়ো হওয়া মেয়ে। এমন জীবনবৃত্তান্ত বিয়ের জন্য মোটেও সুখকর নয়৷ এছাড়াও আরেকটা সমস্যা আছে লিপির। ওর ডান পা জ'ন্মগত একটু বাঁ'কা। এবিষয়ে লিপি স্কুলে এক স্যারের থেকে জেনেছিল এটাকে বলে ‘ক্লা'ব ফুট’। পায়ের পাতা গোড়ালির অস্থিসন্ধির হাড়ের অবস্থাগত তারতম্যের জন্য ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়ে থাকে, যার কারণে পা গলফ খেলার স্টিকের মতো দেখায়। তাই এর নামকরণ হয়েছে ক্লা'ব ফু'ট। হাঁটলে খুবই বিশ্রী লাগে। কিন্তু লিপির এই সমস্যা এতোটাও তীব্র নয়। গোড়ালিও এতো বাঁ'কা না। ব্যথাও করে না৷ কেবল হাঁটার সময় দেখতে ভীষণ বিশ্রী লাগে।


লিপি উঠে রান্নাঘরে গিয়ে বাশে বাঁধা বোতল থেকে বাঁ হাতের তালুতে দাঁত মাজার ছাঁই নেয়। লুবনা সাবান আর বালতি সহ সবকিছু নিয়ে এসে বললো,


- 'মাস্টারমশাইকে আড়াল থাইকা অগ্রীম ধন্যবাদ।'


লিপি দাঁতে আঙুল চালানো থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,


- 'কেন?'


- 'আরে আজকে শনিবার না? আজকে তো বিকালে ছবি আছে। যদি মাস্টারমশাই বিকালে আইতেন তাইলে তো আমার ছবি দেখাই মাটি হইয়া যাইত।'


লিপি ফিক করে হেঁসে ফেললো।


- 'তুমি এতো ছবির পাগল ভাবি।'


লুবনা আসলেই ছবির পাগল৷ এক সপ্তাহ হলো একটা ছোট্ট টিভি এনে দিয়েছে সুজন। বউ পাশের বাড়ি প্রতি শুক্রবার-শনিবারে বিটিভিতে ছবি দেখতে চলে যাবে সেটা ভালো লাগে না তার। একটা টিভি এনে দিয়েছে, এটাই লুবনার কাছে কয়েকদিন থেকে সবচেয়ে বড়ো ঘটনা। 


দু'জন রান্নাঘরের পেছনের দরজা খুলে চাপাকলে চলে এলো। কলতলা পাকা করা। চারটি খুঁটি গেঁড়ে কাপড় দিয়ে গোসল করার জন্য আড়াল করেও দিয়েছে সুজন। 


লুবনা কলে চাপা দিয়ে বালতিতে পানি ভরছে। 


- 'আজকে শাড়ি পরাব তোকে। তোর ভাই আমার লাগি সাজগোজের সব আনছে৷ তোকে সাজাইয়া দিব।'


লিপি আঁজলা ভরে পানি নিয়ে কুলি করে বললো, 


- 'তুমি আমারে শাড়ি পরাইয়া সাজানোর জন্য পাগল কেন? ওইদিন গরমের মাঝে এমন করছো।'


লুবনা ফিক করে হেঁসে ফেললো। 


- 'বস গোসল করাইয়া দেই।'


- 'কেন আমি কি বাচ্চা। তোমার করাইয়া দেয়া লাগবে না। যাও, মেহমান আসলে তো নাশতা-টাশতা বানাতে হবে তোমার।'


লুবনা ওকে টেনে বসাতে বসাতে বললো,


- 'আজকে আমার রান্নাঘর থেকে ছুটি দিছে আম্মা। উনি সব করবে। আমার কাজ সইরে সুন্দর কইরা সাজাইয়া-গুছাইয়া ওর জামাইর সামনে নিয়া যাওয়া।'


লিপি ওর শাড়ির ফাঁকের নগ্ন পে*টে চি*মটি দিয়ে বললো,


- 'এতো জামাইর জামাই করছো যখন তুমি নিজেই বিয়ে বইসা যাও।'


- 'তাইলে আমার ইমতিয়াজের বাপের কি হইব?'


- 'কি আর হইব। দুই বউ যেরকম রাখে। তুমি দুই জামাই রাখবে। পারবা না?'


দু'জন পুনরায় খিলখিল করে হেঁসে উঠলো।

তখনই রান্নাঘর থেকে আলেয়া খাতুনের গলা শোনা গেল। 


- 'কিরে, তোরা এতো খিলখিল করতাছিস কেন। তাড়াতাড়ি গোসল কইরা রেডি হও।'


লুবনা জিভে কা*মড় দিয়ে বললো,


- 'হ আম্মা শেষ।' 


তারপর লিপির দিকে দাঁত কটমট করে ফিসফিসিয়ে বললো,


- 'মা'গী আমাকে বকা শোনাবি না-কি, তাড়াতাড়ি কর।'


আবার রান্নাঘর থেকে আলেয়া খাতুন বললেন,


- 'এইখানে খিলখিল করতাছো, ইমতিয়াজ কোথায় খবর আছেনি?'


- 'হ আম্মা, ওর বাপের লগে গেছে মাঠে গরু দিতে।'


- 'সুজনের আক্কেল কবে অইব। এইটুকু ছেলেরে নিয়া মাঠে যাইবে কেন? এতো পুতুপুতু করলে বাচ্চারা মানুষ হয় না, বুঝলা।'


লুবনা ফিসফিস করে বললো,


- 'হ সুজইন্নারে এরকম পুতুপুতু করে মনে অয় ন*ষ্ট করছেন।'


লিপি ফিক করে হেঁসে বললো,


- 'ভাইয়া নষ্ট? দাঁড়াও আসলে বইলা দিমু।'


- 'তো ন*ষ্ট না? এই শীতের মাঝে...।'


লিপি মুখ চেপে ধরে বললো,


- 'রাখো তো এসব। সারাক্ষণ মুখে শুধু বাজে কথা।'


লিপি মুখ ছাড়ার পর লুবনা বললো, 


- 'দেখ ক্ষীরা খেতে কয়েকটা চোর ঢুকে পড়েছে।'


লিপি তাকিয়ে বললো,


- 'হ্যাঁ ক্ষীরা পারছে তো দেখা যাচ্ছে। মামা কোথায় আজ।'


- 'কি জানি দাঁড়াও আম্মাকে বলি। তুমি গোসল করো।'


লুবনা গিয়ে বলতেই আলেয়া খাতুন বাজখাঁই গলায় লাঠি হাতে নিয়ে বের হলেন। তাদের বাড়ি উঁচু ভিটেতে৷ চাপাকলের পর কলার বাগান আছে। এরপর টলটলে জলের পুকুর। একপাল সাদা হাস আলেয়া খাতুনের গালাগাল শুনে লাফ দিয়ে পুকুরে পড়েছে। পুকুর পাড়ের পর হাওরের শুরু। পাশেই তাদের ক্ষীরা-শসার খেত৷ বাড়ি থেকে উঁকি দিলে দেখা যায়। পুকুরে বাড়ির সবাই এলেও লুবনা আর লিপি আসে না। তারা এখন চাপাকলের উঁচু জায়গা থেকে তাকিয়ে দেখছে। আলেয়া খাতুন লা*ঠি নিয়ে যাচ্ছেন দেখে বাচ্চারা দৌড়ে পালাচ্ছে। সবার হাতেই ক্ষীরা৷ খানিক দূরে গিয়ে তারা তাকিয়ে তাকিয়ে খাচ্ছে। প্রতিদিন মক্তব থেকে ফেরার পথে বাচ্চারা এই কর্ম করেই বাড়ি ফিরে।


লিপির গোসল শেষ হয়েছে। তাকে নিয়ে লুবনা নিজের ঘরে এলো। একটা কথা সে লিপিকে এখনও বলেনি। বাড়ির সবাই এই পাত্রের কাছে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে আছেন৷ আজই কনে দেখে ছেলের পছন্দ হলে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক হবে। লিপিকে এখনও কেউ কিছু বলেনি। ওর পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে চিন্তা করাই অবান্তর। ওর নিজের দূর্বল জীবনবৃত্তান্ত আর পায়ের সমস্যাই এই অধিকার হরনকারী। লুবনা জানে, পছন্দ-অপছন্দের বাছাই করতে হলেও মোটামুটি যোগ্যতা লাগে৷ যাকে বিয়ে দিতে বাড়ির সবার দম বেড়িয়ে যাচ্ছে। তার আলাদা মতামত লাগে না। তবুও লুবনার ভেতরে কেমন খুঁতখুঁত করছে। যুবতী একটা মেয়ে। এরকম জেনে-বুঝে এই জায়গায় বিয়ে হবে? কি হবে এরপর? ওর মায়ের মতোই কপাল নয় তো? আচ্ছা সে কি লিপিকে বলে দেখবে? তাকে তো বলতে কেউ বলেনি। পরে যদি আবার বাড়ির সকলের বকা খায়।

___চলবে___

__আগন্তুক ১ম পর্ব_

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم