এক গ্রামে ছিল করিম নামে এক দরিদ্র কৃষক। তার ছোট একটি জমি ছি
ল, যা থেকে যা ফসল হতো, তাতে কোনোমতে তাদের সংসার চলত। করিমের স্ত্রী রহিমা ছিল খুবই গুণবতী ও পরিশ্রমী। তাদের একটি ছোট মেয়ে ছিল, যার নাম ছিল আয়শা।
একদিন প্রচণ্ড খরার কারণে করিমের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলো। জমিতে প্রায় কিছুই ফললো না। করিম খুব চিন্তায় পড়ে গেল। কী করে সংসার চালাবে, মেয়ের মুখে খাবার তুলে দেবে? রহিমাও স্বামীর কষ্ট দেখে মুষড়ে পড়ল।
করিম নিরুপায় হয়ে শহরে কাজ খুঁজতে গেল। সে একটি নির্মাণাধীন ভবনে শ্রমিকের কাজ পেল। কাজটা খুব কষ্টের ছিল, কিন্তু সে হাল ছাড়ল না। প্রতিদিন সকালে উঠে কাজে যেত আর সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরত। রহিমার দিন কাটত মেয়েকে নিয়ে, আর স্বামীর ফেরার অপেক্ষায়। সেও সেলাই করে কিছু বাড়তি রোজগারের চেষ্টা করত।
এভাবে অনেক দিন কেটে গেল। একদিন করিম কাজ থেকে ফিরছিল। পথে সে দেখল একজন বৃদ্ধ লোক একটি বোঝা নিয়ে কষ্ট করে হাঁটছে। করিম এগিয়ে গিয়ে বৃদ্ধকে সাহায্য করল। বৃদ্ধ লোকটি করিমের সততা ও দয়া দেখে খুব খুশি হলো। সে বলল, "তোমাকে ধন্যবাদ, বাবা। তোমার এই উপকারের প্রতিদান আমি দেব।"
বৃদ্ধ লোকটি আসলে ছিলেন একজন ধনী ব্যবসায়ী। তিনি করিমকে তার গুদামে কাজ দিলেন। করিম কঠোর পরিশ্রম ও সততার সাথে কাজ করত। অল্প সময়ের মধ্যেই সে তার দায়িত্বশীলতার জন্য মালিকের মন জয় করে নিল। ব্যবসায়ী করিমকে ব্যবসার নানা কৌশল শেখালেন।
কিছুদিন পর, করিম তার জমানো টাকা এবং মালিকের কিছু সাহায্য নিয়ে নিজের ছোট একটি ব্যবসা শুরু করল। সে গ্রামে ফিরে এসে তার নিজের জমিতে নতুন করে চাষাবাদ শুরু করল। এইবার সে আধুনিক পদ্ধতির সাহায্যে উন্নত মানের ফসল ফলাতে লাগল। তার ব্যবসা দ্রুত বাড়তে লাগল।
করিম এখন আর দরিদ্র কৃষক নয়। সে একজন সফল ব্যবসায়ী এবং কৃষক। কিন্তু সে তার অতীত ভোলেনি। সে গ্রামের অন্যান্য কৃষকদেরও সাহায্য করত, তাদের নতুন চাষের পদ্ধতি শেখাত। রহিমার মুখে এখন হাসি, আর আয়শা স্কুলে যাচ্ছে।
করিম প্রমাণ করে দিল, সততা, কঠোর পরিশ্রম আর দৃঢ় সংকল্প থাকলে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব।
