"দাঁড়াও.., খবরদার এই বাড়ির চৌকাঠ পেরুবেনা।"
পা থেমে যায় আভার। সে মাথা উঁচু করে তাকালো। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে তার মামী। চোখ মুখে অনল জ্বলছে যেনো। পেছনের এসে দাঁড়ালেন রাফসান চৌধুরী। গম্ভীর কন্ঠে স্ত্রীকে বললেন,
"এইভাবে বাড়ির বউকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা চৌধুরী বাড়ির নিয়মে নেই নীরা।"
"আমি আভাকে এই বাড়ির বউ হিসেবে কখনো মেনে নিবনা চৌধুরী সাহেব। আমার ছেলেকে জোরপূর্বকভাবে তুমি বিয়ে করিয়েছ এইটাও কোনো নিয়মে ছিলনা। সেক্ষেত্রে আমিও চৌধুরী বাড়ির নিয়ম মানিনা।"
রাফসান চৌধুরী ইচ্ছে করেই স্ত্রীর কথার কোনো জবাব দিলেন না। তাঁর বিশ্বাস তাশরীফ সবকিছু সামলে নিবে। তখনি তাশরীফ বলে উঠল,
"মা, এইভাবে বাইরে দাঁড়িয়ে কতক্ষণ থাকব বল? আমাদেরকে ভেতরে যেতে দাও, আমরা একসাথে বসে কথা বলি।"
ছেলের কথা শুনে কিছুটা ন'র'ম হলেন নীরা চৌধুরী। আভার দিকে না তাকিয়েই তাশরীফকে বলল,
"ভেতরে আসো।"
রাফসান চৌধুরী মুচকি হাসেন। তিনি জানেন ওনার ছেলে কেমন। তাশরীফ যতই এই বিয়েতে নারাজ থাকুক। সে তার দায়িত্ব সবসময় পালন করবে।
৫.
"তুই বেলকনিতে কি করছিস? আর এখনো এই ভা'রী শাড়ি পড়ে আছিস কেন? চেইঞ্জ কর... "
তাশরীফ নিচতলা থেকে এসেই দেখল আভা বেলকনিতে। তখনি উপরোক্ত কথাটি সে বলল। মাকে বুঝাতে ভীষণ কষ্ট হয়েছে তার। কিন্তু সেতো চায়না, তার দায়িত্বে কমতি থাকুক। আভাকে সে হয়তো স্বামীর অধিকার দিতে পারবেনা, কিন্তু আভার প্রতি কোনো দায়িত্ব সে এড়িয়ে যাবেনা। এইসব ভাবতেই তি'ক্ত শ্বা'স ফেলে সে।
"এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? কি বলছি শুনতে পাসনি?"
আভা বলল,
"এইখানেতো আমি কোনো ড্রেস নিয়ে আসিনি তাশরীফ ভাই।"
তাশরীফ কিছু একটা ভেবে বলল,
"আমার ওয়ারড্রব থেকে আমার টিশার্ট আর টাওজার নিয়ে ওয়াশরুমে যা।"
"এ্যাহ!"
আভা শুকনো ঢো'ল গিলছে বার বার। তার সাথে এইসব কি হচ্ছে। যে তাশরীফ চৌধুরী নিজের সামান্য পানির গ্লাস কারো সাথে শেয়ার করেনা, সে ড্রেস শেয়ার করছে!?
"এ্যাহ, না হ্যাঁ। যা..."
আভা জলদি ওয়ারড্রব থেকে একটা ব্লু রংয়ের টিশার্ট আর ব্ল্যাক কালার টাওজার নিয়ে ওয়াশরুমে যায় চেইঞ্জ করতে।
৬.
আভা ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই তাশরীফ তার দিকে তাকায়। থমকে যায় সে আভাকে দেখে। এত সুন্দর লাগছে কেন আভাকে আজ? এর আগেওতো সে আভাকে দেখেছে, এমন অনুভূতিতো ছিলনা। আভা তাশরীফের এমন চাহনি দেখে সংকোচে পড়ে যায়। সে আমতা আমতা করে বলল,
"আপনি ফ্রেশ হবেন না?"
তাশরীফের ধ্যান আসতেই সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে সে। কি করতে যাচ্ছিলো এইটা সে? তাশরীফ ফোন টি'প'তে টি'প'তে বলল,
"আমি নিচতলা থেকে ফ্রেশ হয়েই এসেছি। চল..নিচে যায়, ডিনার করব।"
আভা অবাক হয়ে বলল, "কি? এই অবস্থায় আমি নিচে যাব?"
"আজব, এই অবস্থায় নিচে যাব মানে? তুই কি খারাপ অবস্থায় আছিস?"
"মানে, এই টিশার্ট পড়ে?"
তাশরীফ বুঝতে পেরে বলল,
"আচ্ছা তুই রুমেই থাক। আমি আমাদের দুজনের খাবার রুমে নিয়ে চলে আসছি।"
কথাটি বলেই তাশরীফ বিদ্যুৎ গতিতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আভা হা করে তাকিয়ে আছে তাশরীফের যাওয়ার পানে। এইটা কি আসলেই সেই দাম্ভিক, ডাক্তার সাহেব? নাকি অন্য কেউ।
৭.
"তুই রুমে খাবার নিয়ে যাবি মানে? দরকার হলে ওই মেয়ে না খেয়ে থাকবে, তুই কেন রুমে গিয়ে খাবি?"
তাশরীফ প্লেটে খাবার নিজেই নিতে নিতে বলল,
"মা, আমি খাব, আভা না খেয়ে থাকবে এইটাতো হয়না। বিয়েটা অস্বীকার যতই করি, সবকিছুর বিপরীতে এইটাই সত্যি, আভা আমার ওয়াইফ।"
"তাশরীফ তুই আমার মুখে মুখে কথা বলছিস?"
"সরি মা, হার্ট করে থাকলে। মা, ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী, তার দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করে। সেক্ষেত্রে আভা এখন আমার দায়িত্ব। ওর সম্মান মানে এখন আমার সম্মান। এই বাড়িতে ওর অসম্মান হলে আমারও অসম্মান হবে।"
তাশরীফ খাবার নিয়ে চলে যেতেই, রাফসান চৌধুরী বউকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন,
"ছেলে এখন খোকা নয়, এইটাও তার মাকে বুঝতে হবে।"
নীরা চৌধুরী বললেন,
"চৌধুরী সাহেব তুমি আমাকে একদম খোঁ'চা মেরে কথা বলবেনা বলে দিলাম...."
৮.
"ইশশ...."
"কি হয়েছে হাতে, দেখি...."
আভার হাত দেখতেই তাশরীফ বলল,
"আঙ্গুল কে'টে'ছি'স কিভাবে?"
"না, মানে..."
তাশরীফ নিজের খাবারের প্লেটটা রেখে, আভার খাবারের প্লেটটা নিয়ে বলল, "আমি খাইয়ে দিচ্ছি। আজ খাইয়ে দিচ্ছি বলে, সবসময় খাইয়ে দিব, ওইটা মাথা থেকে নামিয়ে ফেল। আর ডক্টর তাশরীফ চৌধুরীর ওয়াইফ হয়ে কেয়ারলেসের মত এই কে'টে ফেলবি, ওই কে'টে ফেলবি, এইসব চলবেনা। বুঝতে পেরেছিস?"
আভা অবাক হয়ে মনে মনে বলল,
"ডাক্তার সাহেব আমাকে ওয়াইফ বলল! সত্যিই শুনেছি? নাকি কানে কম শুনলাম?"
আভাকে খাইয়ে, তাশরীফ বলল,
"তুই গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়।"
"আপনি?"
তাশরীফ খাবার খেতে খেতে বলল,
"আমি কি? আমিও ঘুমাব। বিছানায়।"
"কি!"
আভা ভীত চাহনিতে বলল,
"আপনি বিছানায় ঘুমান, আমি নিচে চাদর বিছিয়ে শুয়ে পড়ছি।"
তাশরীফ খাওয়া শেষে আভার একদম কাছে আসে। আভা ঘাবড়ে যায়। আভা কিছু বলতে যাবে, তার আগেই তাশরীফ আভার কানের কাছে গিয়ে ফি'স'ফি'স করে বলল,
"ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে, মিস..সরি, মিসেস আভা চৌধুরী।"
চলবে....
#যারা এখনো আমার বই "ঘরণী" অর্ডার করেননি, তারা জলদি বইটি অর্ডার করে ফেলুন। বইটির মূল্য ২৪৫ টাকা। বইটি অর্ডার করতে পারেন,
বুকলেট.কম
বইবাগ - BoiBag
পেইজে।
#ঘরণী বইয়ের কিছু লাইন:
১/ বিছানায় গুটিশুটি মেরে বসে থাকা তৃপ্তির উপর জোছনার আবছা আলো এসে পড়েছে।
রঞ্জয় থমকে গেল কয়েক মুহূর্তের জন্য। কী অপরূপা লাগছে তাকে! এ যেন এক রাজকন্যা! রঞ্জয় শুকনো ঢোক গিলে বিড়বিড় করে বলল, “ভরা যামিনীতে আমার চোখের সামনে আছে আমার নিজস্ব চন্দ্র, এই মুহূর্তে আমার ভীষণ হিংসে হচ্ছে ঐ গগনের চাঁদের আলোকে। কেমন অনুমতি ছাড়াই আমার জিনিসে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে!”
২/ “তুমি আমায় হাসাও তেমন, যেমন নীল আকাশে ক্ষণিকের জন্য মেঘ আসে। তুমি আমায় কাঁদাও তেমন, রোজ যেমন দিনশেষে রাত্রি আসে।”
৩/ “নারী হলো একটা ফুল, যে ফুল ঘরে থাকলে শোভার পাশাপাশি সুগন্ধি ছড়ায়। আর এই ফুলই শুকিয়ে গেলে শোভা আর সুন্দর ঘ্রাণের বিলুপ্তি পায়।”
৪/"অপেক্ষা' শব্দটি তখন'ই তিক্ত লাগে যখন প্রিয় মানুষের ক্ষেত্রে হয়। প্রিয় মানুষের চেহারা দেখে ফেললেই মনে হয়, এই প্রশান্তি বয়ে আনার জন্যই বোধহয় অপেক্ষা ক্ষণিকের জন্য তিক্ত লাগে।"
বই: ঘরণী
-মারশিয়া জাহান মেঘ
বইটি সবাই অর্ডার করে ফেলুন। প্রি-অর্ডার শেষে বইয়ের দাম বেড়ে যাবে।