এদিকে মাঝরাতে কারো চাঁপা কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়।


 চোখ খুলতেই দেখি, সাথী আমার বুকে, সাথীকে বুক থেকে সরিয়ে, কান্নার আওয়াজ কোথায় থেকে আসছে তা দেখার জন্য রুমের বাহিরে বের হতেই যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি একেবারেই প্রস্তুুত ছিলাম না। আমি রুম থেকে বের হতেই দেখলাম পাশের রুমে মিরা জায়নামাযে বসে আছে,,

মিরাকে দেখে মনে হচ্ছে মোনাজাত ধরে আছে। মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ আসছে রুম থেকে। আমি আর একটু কাছে যেতেই শুনলাম মিরা মোনাজাতে বলছে। 


"হে আল্লাহ্।

আমার পরম করুণাময় আল্লাহ্!


"তোমার দরবারে দুটি হাত তুলে ধরেছি,

আল্লাহ শুনেছি, মাঝরাত নাকি তুমি প্রথম আসমানে এসে বান্দাদের ফরিয়াদ শুনো? 

আচ্ছা আল্লাহ্ আমি এতিম বলে কি আমার ফরিয়াদ শুনবে না? জানো আল্লাহ্ দুনিয়াতে মানুষ কষ্ট পেলে মা-বাবাকে বলে। তুমি তো আমার মা-বাবাকেও উঠিয়ে নিয়েছো। তুমি ছাড়া যে আসমানের উপরে, জমিনের নিচে আমার আর কেউ নেই। 

"হে আল্লাহ শুনতে পাচ্ছো কি আমার কথা? দুনিয়াতে সন্তান কান্না করে দিলে মা দৌঁড়ে আসে, সন্তানকে কুলে তুলে নিয়ে গালে-মুখে চুমু দিয়ে বলে, "কি হয়েছে, আমার লক্ষী সোনা কাঁদে না। 

হে আল্লাহ্ তুমি তো দুরিয়ার মায়েদের চেয়ে লাখো কোটিগুণ তোমার বান্দাদের বেশি ভালোবাসো। 

তুমি তো সব দেখো, হে মাবুদ। আমার স্বামী আজ অন্যের বুকে শুয়ে আছে, আমার কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে। আল্লাহ্ আমার মা-বাবাকে তুমি তোমার কাছে নিয়ে নিলে, আমায় কেন রেখেছো?

আমাকে কষ্ট দিতে তোমার যদি এতই ভালো লাগে তাহলে দাও আরো কষ্ট। আল্লাহ্ আমি যে আর সইতে পারছি না। একজন পতিতা নারীও তাঁর স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিবে না, আর আমি এতটাই অভাগী জন্ম নেওয়ার পর না পেলাম বাবা-মার ভালোবাসা। 

না পেলাম, স্বামীর ভালোবাসা। আজ আমার স্বামী আমাকে বের করে দিয়ে, অন্য মেয়ের সাথে রাত্রি যাপন করছে। হে আল্লাহ আর কতো কাঁদবো? কত কাঁদলে তোমার রহমতের সাগরে টান লাগবে। আর কত অশ্রু বির্সজন দিলে, তোমার আরশ কুরসী কেঁপে ওঠবে? কত কাঁদলে তোমার রহমান-আর রহিম নামের দয়ার সাগরে টান লাগবে। তুমি না বলেছে এতিমদের অবিভাবক তুমি। তুমি না বলেছে যার কেউ নেই তাঁর তুমি আছো। আল্লাহ এতিম মানুষের চোখের পানি তোমার দেখতে কি খুব বেশি ভালোলাগে? আর যে আমি পারছি না! হে রহিম রহমান আমার আল্লাহ্। আমার স্বামীকে আমার করে দাও। আমার স্বামীকে তোমার জান্নাতে নিয়ে একসাথে থাকতে চাই। 

ও আমার আল্লাহ্ তোমার এতিম গোনাহ্গার বান্দী কাঁদে তুমি দেখো না গো আল্লাহ? কষ্ট দিবে দাও, আরো দাও আমার স্বামীকে আলাদা করে দিয়ো না, আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন কেড়ে নিয়ো না। হে আল্লাহ্ আমার স্বামী আমাকে এতো মারে, এতো কষ্ট দেয়, তুমি তো দেখেছো, আমাকে তিনবার থাপ্পর দিয়েছে তিনবারই আমার ঠোঁট কেঁটে রক্তবাহির হয়ে গেছে। 

ও আমার আল্লাহ্ তুমি আমার স্বামীর উপর গজব দিয়ো না, আল্লাহ্ আমি কিন্তু খুশি আছি তবুও, তুমি রাগ করো না। আমাকে মেরেছে আল্লাহ্ তোমায় কিন্তু মারেনি, আল্লাহ্। আমি কিন্তু খুশি আছি, তুমি রাগ করো না। আমার স্বামীকে তুমি হেদায়েত দাও। আল্লাহ্ তুমি আমার স্বামীকে হেদায়াত দাও। গজব দিয়ো না। আমার স্বামীর বুকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার তৌফিক দান করো আল্লাহ্। তোমার এতিম গোনাহ্গার বান্দী এই ফরিয়াদ রেখে তোমার দরবার থেকে হাত নামাচ্ছে আল্লাহ।

#আমিন।

.

.

.

.

এদিকে দরজার ওপাশ থেকে মিরার মোনাজাত শুনে, নিজের অজান্তে চোখের পানি এসে গেলো। পিছন দিকে তাঁকিয়ে দেখি সাথী দাঁড়িয়ে আছে।


---কাব্য তুমি এখানে আর আমি তোমাকে সারা বাড়ি খুজতেছি। "এই তুমি কাঁদছো কেনো? 


কথাটা বলে সাথীও কান্না করে দিয়ে বললো।


---কাব্য কখনো আমায় ছেড়ে যাবে নাতো? আমি ভয়ানক একটা স্বপ্ন দেখলাম তোমায় নিয়ে, তুমি যদি কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যাও, তাহলে ফল কাঁটা ছুরি নিয়ে বলছি, এটা আমি আমার গলায় চালিয়ে দিবো, তুমি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার আগে আমাকে খুন করে আমার লাশের উপর দিয়ে যাবে।


এদিকে সাথী আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আমি শত অনুচ্ছা সত্ত্বেও সাথীকে বাহুডুরে আবদ্ধ করে নিলাম। সাথী কান্না করতে করতে শার্ট ভিজিয়ে ফেলছে, তারপর সাথীকে ছাড়িয়ে বললাম।


--ভয় পেয়ো না "তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না!


---তাহলে আমার মাথা ছুয়ে প্রমিজ করো আমাকে ছেড়ে যাবে না?


সাথীর কথাটা শুনে আমার হাতটা কাপছে, আমার চোখে বারবার পিচ্চিটার মায়াবী চেহারাটা ভেসে ওঠছে। চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি আসতে লাগলো। কি করবো কিছু বুজতে পারছি না।

জীবনটা এমন কেন? জীবনে কখনো হাজার বছর বেঁচে থাকার ইচ্ছা জাগে। আবার কখনো এক মূর্হুতের জন্যও নয়।


---ওই কাব্য তুমি আমার মাথা ছুঁয়ে প্রমিজ করবে না? কখনো আমায় ছেড়ে যাবে না? প্লিজ প্রমিজ করো, তোমাকে হারালে সত্যি আমি যে বাঁচবো না! মরে যাবো সত্যি। প্লিজ প্রমিজ করো, নইতো ছুরিটা গলায় চালিয়ে দিবো।(সাথী)


--প্লিজ এভাবে বলবে না।

তুমি যে আমার ভালোবাসা। তুমি যে আমার জীবনের একটা অংশ। এই যে তোমার মাথা ছুঁয়ে প্রমিজ করছি, জীবনে কখনো কোনদিন তোমায় ছেড়ে যাবো না। তুমি যে আমার ভালোবাসা। তুমি যে আমার জীবনের একটি অংশ। প্লিজ মরার কথা বলবে না আর। আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো।


---আচ্ছা কাব্য তোমাকে একটা কথা বলি রাগ করবে না তো?


--হু কি বলবে বলো?


---আমায় একটা পাপ্পি দিবে?


--আচ্ছা কাছে এসো,


কাছে আসার কথা শুনেই সাথী এতটা কাছে এসে পড়লো যে, সাথীর নিঃশ্বাস আমার মুখে পড়ছে। আমার ইচ্ছে করছে না তবুও নিজের অজান্তেই সাথীর কপালে একটা ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিলাম। এদিকে সাথী আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। তারপর আর কিছু মনে নেই। তবে কে যেন দরজাটা চাপিয়ে দিলো। হঠাৎ বিছানাটা কাঁপছে, চোখ খুলতেই দেখি, ফোন এসেছে। ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকাতেই দেখি, হিটলারটারের ফোন, "আমি ভয়ে ভয়ে ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে বলতে লাগল!


---কখন থেকে ফোন দিচ্ছি,ফোন ধরার কোন নাম নেই! কয়টা বাজে এখনো ঘুমাচ্ছিস। তাড়াতাড়ি এসে গেট খুলে দিয়ে যা!


হে আল্লাহ কাম সারছে, সাথী এখনো আমার বুকেই শুয়ে আছে। এতো সকালে বাসায় সাথীকে দেখলে আমাকে কুরবাণী করবে। মাথা কাজ করছে না!


--এই সাথী, আর কতো ঘুমাবে! এবার উঠো?

হু, 


---বাবু আর একটু ঘুমায়!


--উঠবা তুমি, তাড়াতাড়ি ওঠো।


তারপর সাথী চোখ কঁচলিয়ে কঁচলিয়ে ওঠে বললো" 


---কী হয়েছে?"


--বাবা এসেছে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে, কুরবাণী করবে আজ আমাদের।(আমি বললাম)


---এখন কী হবে?(সাথী একটু ভয় পেয়ে)


--যা হবার হবে, বুক থেকে সরো, শাড়িটা পড়ে নাও!


তারপর সাথী শাড়িটা ঠিক করে রুমের বাহিরে এলো। আমি ভয়ে ভয়ে বাসায় গেট খুলতেই বাবা বললো" 


---গেট খুলতে এতো সময় লাগে?

আর ওই মেয়ে এখানে কেন? কেন এসেছে এতো সকালে?


আমি ঠিক কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না, খুব ভয় হচ্ছে। পাশ থেকে তখন হঠাৎ! মিরা বলতে লাগলো।


---বাবা সাথী আমার বান্ধবী, এদিক দিয়ে যাচ্ছিলো, আর আমাকে ফোন দিলে আমি আসতে বলি। বাসায় আসার পর দেখি, কাব্য আর সাথী পূর্ব পরিচিত!(মিরা)


---অহ্ আচ্ছা। সাথী মা তুমি কিছু মনে করো না, কাব্যর বাবা এমনি, সবকিছু সন্দেহের চোখো দেখে! (আম্মু)


---আন্টি আমি কিছু মনে করিনি, আমার আজ তাড়া আছে, এখন তাহলে উঠি, অন্য দিন আবার আসবো (সাথী কথাটা বলে চলে গেলো)


সাথী চলে গেলে, মিরাকে ছোট্ট করে একটা ধন্যবাদ দিলাম। মিরা করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।

.

.

.

.

এদিকে মিরার কলেজে ক্লাস শুরু হয়েছে! এতদিন কাজে ব্যস্ত এবং নতুন বউ ছিলো তাই যাওয়া হয় নি। তারপর আব্বু মিরাকে কলেজে দিয়ে আসতে বললো।

বাবার কথামত, মিরাকে কলেজে নিয়ে যাবার জন্য বের হলেই, সাথী ফোন দেয় জিজ্ঞাস করে।


---কাব্য বাবু কোথায় তুমি?


--এইতো আব্বু মিরাকে কলেজে নিয়ে যেতে বললো। তাই দিয়ে আসতে বের হলাম।


---আচ্ছা তোমার যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই, মিরাকে গাড়ি দিয়ে কলেজে পাঠিয়ে দাও


আমি সাথীর কথামত তাই করলাম।

.

.

.

.

তারপর দুপুরে বসে আছি, তখন হঠাৎ মিরার নাম্বার থেকে ফোন আসলো। আমি ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে অপরিচিত কণ্ঠে কেউ একজন বললো।


---Excuse Me

ফোনটা যার তিনি, দুর্ঘটনায় মারা গেছে, লাস্ট ডায়ালে আপনার নাম্বারটা ছিলো। এজন্য আপনাকে কল দিলাম। প্লিজ মেয়েটি যদি আপনার পরিচিত হয়ে থাকে তাহলে, চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হসপিটালে আসুন!


কথাটা শুনে কিছুক্ষণের জন্য আমি পাথর হয়ে গিয়েছিলাম! কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝলাম না। সাথে সাথেই হসপিটালে গিয়ে দেখি, লাশের মাথাটা কেমন যেন থেতলে গেছে। নাক দিয়ে রক্ত বের হয়ে আছে! মুখটা অনেক "মায়াবী" লাগছে। আজ কেন জানি আমার বুকটা ফেটে কান্না আসছে। কিন্তু কেন?

আজ তো আমার সুখের দিন। আমার পথের কাঁটা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। তবে কেন এতো কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে প্রাণটা দেহ থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। 

হে আল্লাহ্ ভালোবাসা পাওয়ার জন্য নিজের স্ত্রীকে খুন করে ফেললাম। তার কিছুক্ষণ পর বাবা-মা আসলো তারাও কাঁদছে। বাবা সবচেয়ে বেশি কাঁদছে।

.

তারপর মিরাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হলো।


আজ মিরার দাফন,


আমি মিরার লাশটা কাঁধে নিয়েছি। মনে হচ্ছে কলিজাতে কেউ ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। দূরে সাথীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। সাথীও আজ কাঁদছে। আকাশ-বাতাস আজ কাঁদছে মনে হচ্ছে।


তারপর মিরাকে দাফন করে। কিছুক্ষণ কবরের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসলাম। 


তারপর সাথী আমাকে নির্জনে ডেকে নিয়ে অনেক কান্না করলো। ক্ষমাও চাইলো। সরাসরি আমার পায়ে পড়ে বলতে লাগলো।


---কাব্য আমাদের ভালোবাসার জন্য একটা নিষ্পাপ জীবনকে হত্যা করে ফেললাম?


আমি সাথীকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বললাম।


--তুমি কিছু অন্যায় করোনি। যদিওবা করে থাকো সব তোমার ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য!


তারপর সাথী চলে গেলো।

আমার মনে হচ্ছে মিরার ছায়া মনে হয় প্রতিনিয়ত আমার পাশে ঘুরে। কেমন যেন উদাসহীন উদাসহীন লাগছে।


আজকে ভাবলাম সাথীর কাছে যাই এভাবে আর পারছিনা! আজ রাতটা সাথীর সাথে থাকবো। সাথীকে ফোন দিয়ে পেলাম না। এজন্য সরাসরি বাসায় চলে গেলাম! বাসায় গিয়ে দেখি দরজা খুলা আমি সরারসি সাথীর রুমে চলে গেলাম! 


হঠাৎ সাথীর রুমের কাছে যেতেই দরজার ভেতর থেকে পুরুষ কণ্ঠের আওয়াজ শুনলাম! আমি ভেতরে কি হচ্ছে তা দেখার জন্য জানালার পর্দা সরিয়ে রুমের ভেতরে তাকাতেই, চমকে উঠলাম! 


এটা কি হচ্ছে? সাথী আর তাঁর ভাই রথক্রিয়ায় ব্যাস্ত। তারপর হঠাৎ সাথী আর সাথীর ভাই যা বললো তা শোনার জন্য আমি একেবারেই অপ্রস্তুত ছিলাম।


#তাদের_কথোপকথন


---বাবু কতদিন ধরে আঁদর করো না, প্লিজ আর একটু কাছে এসো। উম্মাহ্ আমার বাবুটা কি হট! (সজিব যাকে সাথী ভাই হিসেবে চিনতাম)


---ইসসস আমার বুঝি লজ্জা করে না। (সাথী)


---ওমা তাই বুঝি, কোথায় লজ্জা করে? 


কথাটা বলে সজিব সাথীকে কিস করতে লাগলো। আর বলতে লাগলো।


---বাসর রাতে কে আগে জড়িয়ে ধরেছিলো। আর আমরা তো স্বামী-স্ত্রী। আর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কিসের লজ্জা। পৃথিবীর সবাই জানে আমরা ভাই-বোন তবে আমরা দুজন ছাড়া,


কথাটা বলে সাথীর ঠোঁট জোড়ার সাথে সজিবের ঠোঁট জোড়া আবারো মিলিয়ে দিলো।


এদিকে এসব দৃশ্য দেখে আমার পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরছে। যার জন্য আমার নিষ্পাপ বউকে হারালাম। মন চাইছে কালনাগিনীকে খুন করি এখন। মিরার মুখটা এখন বারবার চোখের সামনে ভেসে ওঠছে আমার।


---ওগো শুনছো আমাদের প্ল্যান সাকসেস ফুল হওয়ার পথে। আমাদের পথের কাঁটা মিরাকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছি। মেয়েটা কাব্যকে অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু আমার অভিনয়ের কাছে, সব ভালোবাসা চাঁপা পড়ে গেছে। (সাথী বললো)


---হুম আমার বউটা অভিনয়ে এওয়ার্ড পাবে, তুমি একদম পারফেক্ট অভিনয় করেছো। আর সবচেয়ে রেল গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মরার প্ল্যানের সাথে সাথে অভিনয়টা একদম সুপারহির্ট হয়েছিলো। (সজিব)


---দেখতে হবে না বউটা কার?

এখন শেষ একটা কাজ হচ্ছে আমার জন্য পাগল কাব্যকে বিয়ে করে কৌশলে তার সমস্ত সম্পত্তি লিখে নিয়ে আমার বাবুটাকে নিয়ে আমেরিকা চলে যাওয়া। আর তা, এ মাসেই পূরণ হবে।

(হাসতে হাসতে কথাগুলো বললো সাথী)


এদিকে কথাগুলো, শুনে আমার বুকটা চিনচিনে ব্যথা করছে। মন চাচ্ছে দুইটাকে খুন করি। এদের জন্য আমার স্ত্রী মিরা আজ পরপারে। কিন্তু, না এদেরকে এভাবে মারলে ফেসে যাবো। তাই কৌশলে আমার স্ত্রী হত্যার প্রতিশোধ নিতে হবে।


আজ বাইক চালাচ্ছি, আর মিরার কথা ভাবছি, মনে হচ্ছে মিরা আমার পাশে বসে শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি আসছে।


বাড়িতে এসেই বাবাকে জড়িয়ে ধরে ছোট বাচ্চার মতো কান্না করে দিলাম। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো।


---আল্লাহর উপর ভরসা রাখ, তিনিই সবকিছু ঠিক করে দিবেন।


তারপর রুমে এসে শুয়ে পড়লাম! চোখ বন্ধ করলেই পিচ্চিটাকে দেখতে পাই। খাইতে গেলেও মনে হয় কে যেন বলে। "তুমি খাবে না? তুমি না খেলে আমিও খাবো না"! আমি পারছি না এভাবে আর থাকতে।


তারপর হঠাৎ ক্রিং ক্রিং করে ফোনটা বাজছে, ফোনের দিকে চেয়েই দেখি, কালনাগিনীটা ফোন দিয়েছে। শত অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোন ধরলাম! ওপাশ থেকে। 


---আমার বাবুটা কেমন আছে? আমার বাবুটাকে বড্ড বেশি মিস করছি! বাবুটা একটু আমার সাথে দেখা করবে কি পার্কে। আমার যে বুকটা চিনচিনে ব্যথা করছে। উম্মাহ্ এত্তোগুলা। আর অল্পদিন পরেই আমার বাবুটাকে আপন করে পাবো। প্লিজ এসে পড়ো পার্কে!(সাথী)


আমি কিছু না বলেই কালনাগিনীটার ফোনটা কেটে। পার্কে চলে গেলাম, পার্কে গিয়ে চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে আছি! কালনাগিনীটা নীল শাড়ি পড়েছে,

নোংরা শরীরটাকে ঢেকে রেখেছে, নীল পোষাকের আড়ালে, যদি কেউ নোংরা মনের কার্যকলাপ দেখতে পারতো মনে হয়, কেউ থুথু পর্যন্ত দিতো না এ শরীরে।


---কি হলো বাবু তোমার পছন্দের শাড়ি পড়েছি, কেমন লাগছে বললে না তো?(সাথী) 


--কি বলবো?(আমি)


---আচ্ছা বাদ দাও, আমার পথের কাঁটা তো নেই চলো না বিয়ে করে নিই। তোমাকে ছাড়া রাতগুলো আমার নির্ঘুম কাটে! তুমি যে আমার স্পর্দন। খুব ইচ্ছে তোমাকে আপন করে নেওয়ার আল্লাহ্ আমার সেই ইচ্ছা পূরণ করবে না? আমি যে তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। (সাথী) 


কথাটা বলার সাথে সাথে ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলাম। আর সহ্য হচ্ছে না। 


--এই তুই আমাকে ভালোবাসিস? তাহলে সজিব কে?


---কাব্য কি বলছো এইসব, সজিব তো আমার ভাইয়া! (চোখের পানি ফেলে দিয়ে কথাটা বললো সাথী)


এমন চেহেরা দেখে যে কেউ কালনাগিনীটার মায়ার পড়ে যাবে কিন্তু আমি নয়।


--ছিঃ তোর লজ্জা করে না নিজের স্বামীকে ভাই বলতে। স্বামীকে ভাই বানাতে। আমি সেদিন তোর বাসায় গিয়ে সব দেখেছি, আর শুনেছি! তোদের দুটোকে আমি নিজের হাতে খুন করে আমার ফুলের মতো নিঃষ্পাপ স্ত্রী হত্যার প্রতিশোধ নিবো।(আমি)


---হা হা হা, তাঁর আগে দেখ এই ভিডিওটা, 

তুই যদি সাথীকে বিয়ে না করিস, তাহলে বলবো তুই সাথীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর সর্বনাশ করেছিস। আর সাথী এখন অন্তঃসত্ত্বা। তাই বুঝে নে কি করবি এখন তুই।


কথাগুলো শুনে পিছন দিকে তাকাতেই দেখি, সজিব মোবাইল ফোনে, সাথীর আর আমার হোটেল রুমের ভিডিও এবং বাসার ভিডিও তুলে রাখছে। এসব দেখে নিজেকে আর কন্টোল করতে পারছি ফোনটা আচাড় দিয়ে ভেঙে ফেললাম।


---বাবু খুব রাগ করেছো, এমন হাজারো ভিডিও আছে। আচ্ছা বাবু রাগ করে না আগামি সপ্তাহে আমাদের বিয়ে। তুমি কাজি অফিসে চলে এসো নয়তো, থানাতে পাঠাবো বাসর করতে!(সাথী) 


ওদের কথা শুনে আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। এসব আমার পাপের ফল! তাই এখান থেকে বাসায় চলে আসলাম। 

বাসায় এসে মিরার ছবিটা বুকে নিয়ে কান্না করতে ঘুমিয়ে গেলাম!


পরের দিন সকালবেলা টেলিভিশন অন করতেই আমি যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

.

.

চলবে…………………………♥

.

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم