কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমার বিয়ে হচ্ছে না। আমার বাবা-মায়ের এটা নিয়ে তেমন একটা চিন্তা নেই। মা একটু চিন্তা করলেও বাবার কথা হচ্ছে, ‘বিয়ে দিলে চিন্তা বাড়ে। অন্যের বাড়িতে কি করছে না করছে, চিন্তা হবে অনেক।’


 ইন্টারমিডিয়েট এ পড়া আমার ছোট বোন পিচ্চি দেখতে একটা ছেলেকে বিয়ে করে আমাদের বাসায় উঠেছে। আমি মাস্টার্স এ এডমিশন নিয়েছি।


কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমার বিয়ে হচ্ছে না। আমার বাবা-মায়ের এটা নিয়ে তেমন একটা চিন্তা নেই। মা একটু চিন্তা করলেও বাবার কথা হচ্ছে, ‘বিয়ে দিলে চিন্তা বাড়ে। অন্যের বাড়িতে কি করছে না করছে, চিন্তা হবে অনেক।’


যাই হোক, আমার ছোট বোন আনিশা বিয়ে করে বর নিয়ে আমাদের বাসায় উঠেছে এবং তারা নাকি এখানেই থাকবে। আনিশার বর অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে। ছেলের নাম অর্ক। ছেলেটা দেখতে সুন্দর। কিন্তু নেতা নেতা একটা ভাব আছে ওর মধ্যে।


.


ঘটনার শুরুটা এরকম -


সকালে আমি টিউশনে গেলাম। এসে মাত্র ড্রেস চেঞ্জ করে মাকে সাহায্য করতে রান্না ঘরে ঢুকলাম। তখনই কলিং বেল বাজে। 


-- 'তুই তরকারিটা দেখ। আমি দরজা খুলছি।'


একথা বলে মা দরজা খুলতে গেলো।একটু পর মায়ের চিৎকার শুনে আমি রান্নাঘর ফেলে দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখি আনিশা লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরা। পাশে পাঞ্জাবি পড়া লাজুক লাজুক মুখে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে।


-- 'দেখ রামিসা, তোর বোন কি বলে।'


-- 'কি হয়েছে মা?'


-- 'তোর বোনের মুখে শুন কি হয়েছে।'


-- 'আনিশা, কি হয়েছে?ছেলেটা কে?'


-- 'আমার স্বামী।'


-- 'মানে!'


-- 'মানে ছাড়ো তো আপা। নতুন জামাইকে এভাবে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছো কেন? ভিতরে যেতে দাও। আর বাসায় মিষ্টি আছে? মিষ্টি আর শরবত রেডি করো।'


আমি আর মা দুজন দুজনের দিকে তাকালাম। আমাদেরকে সরিয়ে আনিশা ছেলেটাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো।


-- 'তুমি সোফায় বসো। ফ্যান ছেড়ে দিচ্ছি। আর হঠাৎ করে তো সব, তাই একটু সময় লাগবে জামাই বরণ করতে।'


-- 'নো প্রবলেম ডার্লিং।'


আমি আর মা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। 


আনিশা আমার কাছে এসে ধাক্কা দিয়ে বললো,

-- 'আপা, কি বলেছি তোমাকে? মা,তোমার হাতের রোস্ট তো সেই হয়। রোস্ট করবা। অর্ক আবার রোস্ট পোলাও অনেক পছন্দ করে। বাসায় গরুর মাংস আছে? না থাকলে নাই। বড় মাছ আছে না? বড় মাছের পেটি ঝাল ঝাল করে রান্না করবা। আর আপা,টাকা দিও, কোক লাগবে তো!'


আমার মনে হচ্ছিলো স্বপ্ন দেখছি আমি। মার চিৎকারে আমার সম্বিৎ ফিরলো।


-- 'বেয়াদব মেয়ে। বেলাজ! কি করেছিস তুই? ঘরে একটা ছেলে ঢুকিয়ে বলছিস ও তোর স্বামী। কোনো লাজ লজ্জা দূর,ভয়ও নাই তোর? আবার আমাদেরকে হুকুম করছিস তোর ওই বেলাজ স্বামীর জন্য এটা ওটা করতে!'


-- 'মা, আমাকে যা বলার বলো। অর্ককে নিয়ে একটা কথাও বলবা না।'


-- 'বের হ তুই আমার বাসা থেকে। সাথে তোর প্রাণের স্বামীকেও নিয়ে যা।'


-- 'এই বাসায় আমার হক আছে মা। এভাবে আমাকে বের হয়ে যেতে বলতে পারো না। অর্ক,তুমি আমার রুমে যাও। সোজা গিয়ে বাঁ দিকে প্রথম রুমটা আমার।'


অর্ক নামের ছেলেটা উঠে বাধ্য ছেলের মতো রুমে চলে গেলো। মা মেঝেতে বসে পড়লেন।


আমি মাকে ধরলাম।


-- 'আনিশা, যা পানি আন মায়ের জন্য।'


-- 'না না খবরদার। ওই মেয়ের হাতের কিচ্ছু খাবো না আমি। এই মেয়ে পানিতে বিষ মিশিয়ে এনে দিবে।'


আনিশা মুখ শক্ত করে বললো,

-- 'বেলাজ হতে পারি, খু'নি না আমি।'


-- 'আল্লাহর দোহাই লাগে আনিশা। চুপ কর। পানি আন। মায়ের শরীর কাঁপছে।'


আনিশা পানি এনে দিলো। মাকে পানি খাইয়ে রুমে নিয়ে গেলাম।


মা আমাকে বললো,

-- 'তোর বাবা এলে কি বলবো রে রামিসা? কি করবো আমি? তোর বাবা তো হার্ট অ্যাটাক করবে রে!'


-- 'চিন্তা কোরো না মা। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি রেস্ট নাও। আমি দেখছি কি করা যায়।'


মাকে আশ্বস্ত  করলেও আমি জানিনা কিভাবে কি করবো। বাবা আনিশাকে অসম্ভব ভালোবাসেন। আনিশার এমন কোনো আবদার নেই যা বাবা পূরণ করেন না। কিভাবে আনিশা এই কাজ করলো তা আমি ভেবে পাচ্ছি না।


.


বাবা এলেন রাতের আটটায়। আমি আর মা ডাইনিং টেবিলে বসে। দুপুরে আমরা খেতে পারিনি। বেগুনের তরকারি রান্না করা ছিলো, আর কিছু রান্না হয়নি বাসায়। আনিশা এসব দেখে মুখ গোমড়া করে বসে ছিলো কিছুক্ষণ।


তারপর বাইরে থেকে অর্ডার করে আমার হাতে বিলটা ধরিয়ে দিয়ে খাবার নিয়ে রুমে চলে গেলো। নিরুপায় হয়ে বিলটা দিতে হলো। মা অসহায় ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকালো। আমি শুকনো হাসি হাসলাম। আর কি করবো!


বাবা এসে আমাদেরকে শুকনো মুখে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,


-- 'কি হয়েছে? মা মেয়ে এভাবে বসে আছো কেন?'


মা আমার দিকে তাকালেন।আমি উঠে গিয়ে বাবার হাত থেকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বললাম,


-- 'ফ্রেশ হয়ে নাও বাবা, খাবার দিচ্ছি।'


-- 'কিন্তু মনে হচ্ছে কিছু হয়েছে।'


-- 'কিছু হয়নি। যাও তো, ঘামে ভেজা শার্ট নিয়ে বেশিক্ষণ থাকলে ঠান্ডা লাগবে।'


.


বাবা ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসলেন।

-- 'আনিশা কোথায়?'


আমি আর মা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম।


-- 'ঘুমিয়ে পড়েছে।'


-- 'সেকি? শরীর খারাপ নাকি?'


-- 'ওইতো, একটু মাথা ব্যথা....'


-- 'তো আমাকে জানালি না কেন? যাই দেখে আসি।'


-- 'না না না। বাবা,শুনো। খেয়ে নাও। ও ঘুমিয়েছে। এখন জাগানো যাবে না।'


বাবা আর প্রশ্ন না করে খেয়ে নিলেন। বাবা খাওয়ার পর সোফায় বসে সবাইকে নিয়ে গল্প করেন। সোফায় বসে গল্প করতে করতে একসময় ফ্লোরে বসে পড়েন।অনেক্ষণপর বলেন,'আরে,ফ্লোরে আসলাম কিভাবে!' আমরা সবাই মিলে হাসি।


আজ আতঙ্কিত হয়ে বসে আছি। বাবা অনেক গল্প করছেন, আমি আর মা চুপ।


-- 'তোমাদের কি হয়েছে আজ?'


-- 'কই না, কিছু না। তুমি বলো। শুনছি আমরা।'


মা আমাকে বার বার ঠেলছেন আনিশার কথা বলার জন্য। কিন্তু দূর্ভাগ্য বা সৌভাগ্যবশত বলবো জানিনা, আমাকে বা মাকে আনিশার ব্যাপারে বলতে হলো না।


আনিশা নিজেই তার পিচ্চি জামাইকে নিয়ে বাবার কাছে এসে কদমবুসি করে বললো,


-- 'বাবা,তোমার জামাই। ওর নাম অর্ক। এই অর্ক, বাবার পায়ে ধরে সালাম করো।' (পায়ে ধরে সালামের কথা গল্পের খাতিরে লেখা হয়েছে।)


আমি আর মা আতঙ্ক নিয়ে বাবার উত্তরের অপেক্ষা করছিলাম। আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে বাবা....


(চলবে)...



إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم