জ্ঞান ফিরে চোখ বন্ধ রাখা অবস্থাতেই বুঝতে পারছি কেউ আমায় খুব কাছ থেকে দেখছে



জ্ঞান ফিরে চোখ বন্ধ রাখা অবস্থাতেই বুঝতে পারছি কেউ আমায় খুব কাছ থেকে দেখছে

জ্ঞান ফিরে চোখ বন্ধ রাখা অবস্থাতেই বুঝতে পারছি কেউ আমায় খুব কাছ থেকে দেখছে

। তার গরম নিশ্বাস আছড়ে পরছে আমার মুখে। চারিদিকে কেমন একটা তিখনো গন্ধে মো মো করছে। খুব বেশি অস্বস্তি হচ্ছে আমার। ধিরে ধিরে চোখ মেলে তাকালাম আমি। আর তাকিয়ে সামনের লোকটাকে দেখে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে তাকে নিজের শরীরের সমস্থ শক্তি দিয়ে জোরে ধাক্কা দিলাম আমি। আমার ধাক্কায় মনে হয়না তার কিছু হলো। বরং ধাক্কা খেয়ে সে হো হো করে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে আমার থেকে একটু দুরে সরে বসলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে হাসি থামিয়ে বললো


-- কি জানেমান আমায় দেখে ভয় পেলে নাকি? আরে ভয় পাচ্ছো কেনো আমি তো তোমারই আশিক। তোমার হবু বর। হবু বরকে বুঝি কেউ ভয় পায়? 


কথাগুলো বলে আশিক আবারো অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। ইশশ কি বিশ্রি আর গা হিম করা সে হাসি। আমার গায়ের প্রতিটা লোম দাড়িয়ে যাচ্ছে ভয়ে আশিকের ঐ বিতঘুটে হাসি শুনে। 


আশিককে দেখতে অনেক লম্বা ঠিক হাসানের মতো ৬ ফুট হবে হয়তো। কিন্তু আশিকের গায়ের রঙ কেমন লাল রঙের। সাথে চোখের মনিগুলোও গাড়ো লাল রঙের। মুখটা কেমন গোলগাল, স্বাভাবিকের চাইতে বেশি মোটা ভ্রু, নাকটা দেখে মনে হচ্ছে যেনো একটা  লাল ব্যাঙ বসে আছে। চুলগুলোর রঙ বাদামী রঙের আর কোকরানো। আশিক বেশ মোটাকাটা। নামের সাথে একটুও মিল নেই আশিকের। ওকে দেখতে ভয়ংকর হলেও কেমন জানি একটু জোকার জোকার টাইপ। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখে ভয় পেলেও এখন কেমন জানি হাসি পাচ্ছে আমার। 


আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আশিক আমার কাছে এগিয়ে এসে বললো


-- জানেমান এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো। আমায় খুব বেশি ভালো লেগেছে বুঝি। আমি তো তোমারই, আমাকে দেখার জন্যে তুমি সারাজীবন সময় পাবে। এখন যাও ফ্রেশ হয়ে কিছু খাবে চলো। আজ তিনদিন হলো তুমি অজ্ঞান হয়ে আছো।


আশিকের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম আমি। আমি গত তিনদিন হলো এভাবে অজ্ঞান হয়ে আছি? এটা কি করে সম্ভব? আর আমার হাসান দাদিমা আর কুহেলি ওরা কোথায় আছে। ওরা ভালো আছে তো? 


আমি যখন এসব ভাবতে ব্যাস্ত তখনি আশিক বলে উঠলো


-- ওহ জানেমান কি এত ভাবছো বলো তো? তোমার কি কিছু লাগবে? আমায় বলো আমি এখনি এনে দিচ্ছি। 


-- আমি হাসানের কাছে যাবো। আপনি আমায় কেনো ধরে এনেছেন, আমি আমার হাসানের কাছে যাবো আমাকে হাসানের কাছে যেতে দিন।


আমার কথা শুনে মুহুর্তেই আশিকের মুখ রক্তবর্ণ ধারন করলো। রাগে কটকট করতে করতে আশিক বললো


-- আমি ছাড়া আর কারো নাম মুখে আনবেনা তুমি। তাহলে তোমার জন্যে সেটা মোটেও ভালো হবে না। ঐ হাসান কেউ হয়না তোমার। আমিই তোমার সব তোমার সাথে আমি বিয়ের সব ব্যাবস্থা করে ফেলেছি। কালকে আমাদের বিয়ে এখন ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার পাঠাচ্ছি।


এতটুকু বলেই রাগে খোস খোস করতে করতে রুম থেকে চলে গেলো আশিক। রাগলে আশিককে কি ভয়ানক দেখতে লাগে উফ। আমি সত্যিই এবার খুব ভয় পেয়ে গেছি। 


আশিক চলে গেলে চারিদিকে চোখ বুলালাম আমি। আমি যে রুমটাতে আছি রুমটা বিশাল বড়। তবে রুমের মাঝের সব কিছু কেমন কালো আর লাল রঙের। রুমের দেওয়ালের সাথে আঁকা আছে বিশাল বিশাল সব সাপের ছবি। এমনকি খাট ও আসবাবপত্রের ডিজাইন গুলোও সাপের মতো করে করা। কেমন একটা গা ছম ছমে পরিবেশ। আমার ভিশন অসস্তি আর খারাপ লাগছে এখানে থাকতে। ইচ্ছা করছে এখনি দৌড়ে পালিয়ে যাই। কিন্তু আমি জানি আমি চাইলেও সেটা করতে পারবো না। কারন আমি এখন পৃথিবীতে নয় বরং ভয়ানক এক জ্বীন রাজ্যে আছি। হাসানের কথা মনে হচ্ছে বার বার। আর মনে পরতেই চোখ ফেটে কান্না আসছে। আমি বসে বসে হাসানের কথা ভেবে কান্না করতে লাগলাম। হাসান আমায় যে ভাবে সাজিয়ে ছিলো আমার গায়ে এখনো সেই একি সাজই আছে। হাসানের দেওয়া জামা গয়না সব ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছি আমি। আর হাসানের কথা মনে করে কাদছি। 


বেশ কিছুক্ষণ কান্না করার পর আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আনন্দ আর খুশিতে আমার চোখ মুখ চকচক করে উঠলো।  আমি বিছানা ছেড়ে নেমে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর আশিকের নাম ধরে ডাকতে লাগলাম


-- আশিক, আশিক আপনি কি শুনছেন? কোথায় আপনি?


আমার ডাক শুনে মুহুর্তের মাঝে কোথা থেকে যেনো আমার সামনে এসে হাজির হলো আশিক। আশিকের মুখে ফুটে উঠেছে খুশির ঝিলিক। আমি আশিককে আমার সামনে আসতে দেখে লজ্জা মাখা মুখ করে বললাম


-- আশিক, কেমন হবু বর আপনি। যে আমি তিনদিন হলো কিছু খাইনি তবুও আমার খাবার ব্যাবস্থা না করেই এখান থেকে চলে গেলেন? আমার বুঝি খুধা লাগেনি?


আমার কথা শুনে আশিক খুশিতে গদগদ হয়ে বললো


-- জানেমান তুমি আমায় নাম ধরে ডাকছো,  আবার আমার সাথে নিজে থেকে কথা বলছো। নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিনা আমি। আসলে তোমার মুখে হাসানের নাম শুনে রেগে গিয়ে চলে গিয়েছিলাম আমি। দুঃখিত চাঁদনী আমি এখনি তোমার খাবার আনাচ্ছি।


আশিকের কথা শুনে আমি লজ্জা মাখা মুখ করে বললাম


-- আপনি চলে যাওয়ার পর আমি ভেবে দেখলাম যে হাসান জ্বীনের চাইতে আপনি অনেক বেশি শাক্তিশালি জ্বীন। আর আমার মতো একজন শাক্তিশালি জ্বীন কন্যার জন্যে আপনিই উপযুক্ত বর। তাই ঐ হাসানকে ভুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।


আমার কথাগুলো শোনার পর আশিকের মুখ দেখে মনে হচ্ছে না যে উনি আমার কথাগুলো হজম করতে পেরেছে। তবুও মুখে জোর পুর্বক হাসি ফুটিয়ে গম্ভির গলায় বলে উঠলো


-- তুমি বসো আমি এখনি তোমার জন্যে খাবার আনার ব্যাবস্থা করছি চাঁদনী। 


কথাটা বলেই হাতে তালি দিলো আশিক। সাথে সাথে কোথা থেকে যেনো দুজন মেয়ে এসে হাজির হলো আমাদের সামনে। মেয়েদুটোকে মানুষের মতো দেখতে হলেও কেমন যেনো একটু অদ্ভুত। মেয়ে দুটোর গায়ের রঙও লাল আর চোখের মনির রঙও লাল। বেশ লম্বাচওড়া আর গোলগাল দেখতে মেয়ে দুটোকে। মেয়ে দুটো সামনে এসেই মাথা নিচু করে আশিককে বললো


-- আমাদের ডেকেছিলেন আকা?


-- হ্যা, তোরা এখুনি যা আর তোদের রানীর জন্যে জ্বীন রাজ্যের সেরা খাবার গুলো নিয়ে আয়।


-- জ্বি আমরা এখনি আনছি আকা।


কথাটা বলেই আমার চোখের সামনে অদৃশ্য হয়ে গেলো মেয়ে দুটো। তারপর দু মিনিটের মাঝেই আবার হাজির হলো হাতে না না রকমের সব বাহারি খাবার ও ফলমুল নিয়ে।


তারপর আমার সামনে একটা টেবিল দৃশ্য মান হলো। আর তার ওপর খাবার গুলো রেখে মেয়ে দুটো মাথা নিচু করে পাশে দাড়িয়ে রইলো। 


খাবার গুলো দেখে আমার চোখ কপালে ওঠার অবস্থা। কারন আমার সামনে যত খাবার রাখা হয়েছে এই খাবার আমি ছয় মাসেও হয়তো খেয়ে শেষ করতে পারবো না। খাবার গুলো দেখে ঢোক গিলে আমি বললাম


-- এই এত খাবার কার জন্যে?  এত খাবারতো আমি ছয় মাসেও খেয়ে শেষ করতে পারবো না। 


আমার কথা শুনে আশিক হেসে দিয়ে আমার থেকে কিছুটা দুরুত্বে বসে বললো


-- তুমি খাওয়া শুরু করো চাঁদনী তারপর দেখো পারবে কি না।


আশিকের কথা শুনে আমি আর কথা বাড়ালাম না। এমনিতেও প্রচন্ড খুধা লেগেছে আমার। তাই একটা লাল টকটকে আপেল তুলে নিলাম খাওয়ার জন্যে।  আপেলটা স্বাভাবিকের তুলনার অনেক বেশি বড়। এত বড় আপেল আমি আগে কখনো দেখিনি। বেশি কিছু না ভেবে বিসমিল্লাহ বলে আপেলে কামড় বসালাম আমি।


আপেলটা অসাধারন সুন্দর ও সুস্বাদু খেতে। খুব মিষ্টি রসালো আর নরম।  স্বাদে স্বাদে এক নাগাড়ে খেয়েই চলেছি আমি। কতটা খাচ্ছি সেদিকে আমার খেয়ালই নাই। যখন খেয়াল হলো তখন সামনে তাকিয়ে দেখলাম টেবিলে রাখা অর্ধেক খাবার ও ফলমুল শেষ করে ফেলেছি আমি। কিন্তু আমি এত খাবার কি করে খেলাম?


-- আ আমি এত খাবার কখন খেলাম? আমি তো আমার জীবনেও এত খাবার খাইনি। 


আমার কথা শুনে আশিক হা হা করে হাসতে হাসতে বললো


-- বলে ছিলাম না চাঁদনী তুমি খেতে শুরু করো। এখন দেখলে তো? তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো তুমি কোনো সয়াধান মানুষ নও তুমিও একজন জ্বীন কন্যা। একজন অসিম শাক্তিশালি পরী।


আশিকের কথা শুনে আমি আর কিছু বললাম না। শুধু মুচকি হাসলাম। তারপর আশিককে বললাম


-- আমি তো কখনো কোনো জ্বীন রাজ্যে আসিনি। তাই আমি এই জ্বীন রাজ্যটা একটু ঘুরে দেখতে চাই। আপনি একটু ব্যাবস্থা করে দিতে পারবেন আশিক?


আমার কথা শুনে আশিক বাকা হেসে বললো


-- অবশ্যই ঘুরে দেখবে চাঁদনী। আমি নিজে তোমায় ঘুরে ঘুরে দেখাবো। কিন্তু তার আগে তুমি এই সব পোষাক চেঞ্জ করে আমাদের জ্বীন রাজ্যের পোষাক পড়ে নাও। আর তোমার সাথে একজন দেখা করার জন্যে বসে আছে তার কাছে চলো।


-- কে সেই একজন?


-- আমার দাদি আর তোমার নানি চাঁদনী। সে তোমায় দেখবে বলে অধির আগ্রহে বসে আছে।


-- আমার নানি? আমি অবশ্যই  যাবো তার সাথে দেখা করতে। কিন্তু আমি এগুলো চেঞ্জ করে পড়বো কি?


আমার কথা শুনে আশিক মুহুর্তের মাঝে আমার সামনে কিছু পোষাক আর জুয়েলারি এনে হাজির করলো। পোষাক আর জুয়েলারিগুলো  কেমন অদ্ভুদ।  পোষাকটা গাউন জামার মতো তবে কেমন জানি কাপড়টা, সাথে গাউনটার ডিজাইনও কেমন জানি অদ্ভুত টাইপের সাপের মতো। আর প্রতিটা জুয়েলারি সাপের মতো করেই ডিজাইন করা। এমন অদ্ভুত রকমের সব কিছু দেখে আমি বলে উঠলাম


-- আচ্ছা আশিক আপনাদের জ্বীন রাজ্যের সব কিছু এমন অদ্ভুত দেখতে কেনো। সব কিছুতেই কেমন সাপের ডিজাইন করা। 


-- কারন আমরা ইফ্রিত জ্বীনেরা সবাই সাপের রুপে থাকি। আর মাঝে মাঝে কালো কাকেরও রুপ নেই। তবে সাপের রুপটাই আসল আমাদের। তাই আমাদের সব কিছুতেই সাপের ডিজাইন করা। এগুলো পড়ে দেখো চাঁদনী তোমায় অনেক সুন্দর লাগবে। 


আশিকের কথা শুনে আমি আর কিছু বললাম না। পোষাকগুলো নিয়ে ওয়াশরুমে  চলে গেলাম। ওয়াশরুমটাও কেমন অদ্ভুত ধরনের। আর কেমন গা হিম করা ঠান্ডা। ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা করলাম ও পড়লাম আমি। তারপর চোখ খুলে মুচকি হেসে পোষাক চেঞ্জ করে নিলাম আমি। তারপর বাইরে বেরিয়ে এলাম। ততক্ষণে আশিক চলে গেছে সেখান থেকে।সাথে ঐ মেয়ে দুটোও।


আমি আশিকের দেওয়া সব জুয়েলারি গুলো পড়ে নিলাম। তারপর আয়নায় নিজেকে দেখে মনে মনে আশিকের ৩২ গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলাম।


-- ব্যাটা শয়তান যেমন তোকে দেখতে তেমনই তোর চয়েজ। ছিইইই এগুলো কোনো জামা আর জুয়েলারি হলো। দেখে মনে হচ্ছে যেনো গায়ে এক বস্তা সাপ জরিয়ে আছি। ব্যাটা বজ্জাত আশিক তোকে তো আমি দেখে ছাড়বো। চাঁদনীকে বিয়ে করার সাধ তোকে হারে হারে বুঝাবো আমি।মনে মনে


আমার কথা শুনে অদৃশ্য থেকে কেউ একজন হা হা করে হাসতে লাগলো।তার হাসি শুনে আমি একটা ভেঙচি কেটে উঠে দরজার দিকে পা বাড়ালাম,,,,,,,,,,,,,


চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,


আবারও রহস্য, বলি এত রহস্য মাথার মধ্যে আসে কেমনে রে চাঁদপাখি😋😋


তিনদিন পর তো চাঁদনীর শক্তি পাওয়ার কথা কিন্তু এখনো শক্তি পেলোনা কেনো?🤔🤔

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post