শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে ঘু
ম ভেঙ্গে গেল ইমনের। ঘুম ভেঙে তাকিয়ে দেখল ও নিজের রুমে বিছানায় শুয়ে আছে। কিন্তু সারা শরীরে অসম্ভব ব্যথা করছে তার। যেন শরীরের জায়গায় জায়গায় অনেকটা করে ছিলেও গেছে। সেখানে বেশ জ্বালা করছে তার। হাতটা নিজের কাঁধে জ্বালা করার জায়গায় টাচ করতেই হাতের সাথে জমে যাওয়া রক্ত লেগে গেল।
আর তখনই ইমন এর মনে পড়ে গেল জঙ্গলের মধ্যে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাগুলো। ঘটনাগুলো মনে পড়তেই যেনো মাথা ঘুরতে শুরু করলো তার। ও যদি সত্যিই জঙ্গলে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে গিয়ে থাকে তাহলে ও নিজের রুমে নিজের বিছানায় এলো কি করে? এমন হাজারটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগল। কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছেনা সে। তাই খাট থেকে নিচে নেমে আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখল। হ্যাঁ ও তো নিজের রুমেই আছে। তাহলে কি সেগুলো সব স্বপ্ন ছিল? কিন্তু স্বপ্ন কিভাবে হতে পারে? স্বপ্ন হলে শরীরে এত ব্যথা আর এই আঘাতের দাগ গুলো কিসের? এটা তো স্বপ্ন হতেই পারে না। এটা অবশ্যই রিয়েল। কিন্তু রিয়েলি যদি হবে ও জঙ্গল থেকে নিজের রুমে কিভাবে এলো। এমন হাজারটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে খেতে যেনো পাগলের মত অবস্থা হয়ে গেল ইমনের। অনেক চিন্তা ভাবনার পর নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন করলো আকাশের কাছে।
বেশ কয়েকবার কল বেজেবেজে কেটে যাওয়ার পর রিসিভ করলো আকাশ। তারপর ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠে বলে উঠল,
-- হ্যালো ইমন তুই ঠিক আছিস?
আকাশের এই ছোট্ট কথাতেই যেনো চিন্তাটা আরো বেশি বেড়ে গেল ইমন এর। কারণ ও বুঝতে পারল তাহলে আকাশও হয়তো ওর মতোই অসুস্থতা বোধ করছে। আর ওরা হয়তো স্বপ্ন নয় বাস্তবেই এমন কিছু দেখেছে। তার পরেও সন্দেহবশত আবারো জিজ্ঞেস করেই ফেলল আকাশকে,
-- আকাশ তুই এখন কেমন আছিস, আর কোথায় আছিস তুই?
-- আমি নিজের বাসায় এবং নিজের বিছানাতেই আছি ইমন। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছিনা আমি এখানে কিভাবে এলাম? আমরা চার বন্ধু তো জঙ্গলের মাঝে ছিলাম, আর একটি বাতাস এসে আমাদের গায়ে লাগার পর আমরা সবাই জ্ঞান হারিয়ে যাই। বুঝতে পারছি না বাসায় কিভাবে আসলাম আমি। এখানি তোকে ফোন করতে চেয়েছিলাম যে তুই কি আমাকে নিয়ে এসেছিস অজ্ঞান অবস্থায়?
আকাশের কথাগুলো শুনে দরদর করে ঘামতে শুরু করলো ইমন। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো বা হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে মুছে নিয়ে বলে উঠল,
-- আমিও বুঝতে পারছি না আকাশ, আমরা কিভাবে নিজেদের বাসায় পৌছে গেলাম। এবং নিজেদের ঘরে নিজেদের বিছানায়। আমার মাথার মধ্যে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। একবার মনে হচ্ছে আমি সব কিছু স্বপ্ন দেখেছি আবার মনে হচ্ছে এগুলো স্বপ্নের কিছুই না সব বাস্তব। আচ্ছা তোকে আর আমাকে তো সাগর আর তন্ময় নিয়ে আসেনি সেখান থেকে?
-- না ইমন আমাদের ওরা নিয়ে আসেনি। আমি ওদের কাছে একটু আগে ফোন করেছিলাম। ওদেরও একই অবস্থা, আমরা কোন স্বপ্ন দেখিনি আমাদের সাথে বাস্তবেই এমন হয়েছে। কিন্তু বুঝতে পারছি না এটা কিভাবে হলো। আচ্ছা তুই এক কাজ কর এখন তো সকাল দশটা বাজতে চলল! তুই দ্রুত রেডি হয়ে কলেজে চলে আয়। আমিও কলেজে যাচ্ছি আর ওরাও আসছে। সেখানেই বাকি কথা হবে আমাদের।
কথাগুলো বলে ইমনকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিল আকাশ। ইমন বেশ কিছুক্ষণ ধরে ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে বিছানার উপরে এসে ধপ করে বসে পড়লো। তারপর বেশ কিছুক্ষণ মনে করার চেষ্টা করলো ও বাসায় কিভাবে আসলো। কিন্তু যখন কিছুতেই মনে পড়ছিলো না তখন ফোনটা বালিশের পাশে রেখে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য। ফ্রেশ হয়ে এসে জামাকাপড় চেঞ্জ করে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলো। ও বাইরে বের হতেই ওর আম্মু এগিয়ে এসে বলল,
-- ইমন তোমার কি হয়েছে বলোতো? কালকে দুপুরের আগে কলেজ থেকে ফিরে বাসায় এসে শুয়ে পড়লে। আর কত বার ডাকলাম তোমায় কিন্তু একটুও দরজা খুললে না। কি ব্যাপার বলতো?. আর আজকে সেই ঘুম থেকে উঠলে সকাল দশটায়। আমরা সকলে কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জানো তুমি? শেষে তোমার আব্বু ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে তোমার রুমে ঢুকে দেখেছে যে তুমি ঘুমিয়ে আছো। তাই তোমাকে ডাকা হয়নি। তোমার কি শরীর খারাপ?
আম্মুর এমন কথা শুনে আরো বেশি অবাক হল ইনম। কারণ ওরা কালকে দুপুরে কলেজ থেকে সোজা শিখার পিছন পিছন গিয়েছিল। তাহলে ওর আম্মু কি ভাবে বলছে যে ও দুপুরে কলেজ থেকে সোজা বাসায় এসে শুয়ে পড়েছে? এটা কিভাবে সম্ভব? এসব ভাবতে আবার মাথা ঘুরে উঠছে ইমনের। আম্মুকে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না ও। তাই কথা কাটিয়ে যাওয়ার জন্য বলল,
-- আম্মু আমার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে তাড়াতাড়ি খেতে দাও। কলেজ যেতে হবে। কাল শরীর খারাপ ছিল তাই শুয়ে পড়েছিলাম। আর কথা বাড়িয়ো না প্লিজ।
কথাটা বলেই ওর আম্মুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই টেবিলে গিয়ে বসে পড়ল এমন। ওর আম্মু কিছু আর জিজ্ঞেস না করে একটি ছোট করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। কারণ সে জানে তার ছেলের ব্যাপারে। সে একবার কিছু না বলতে চাইলে তাকে দিয়ে বলানো প্রায় অসম্ভব। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ইমন এর জন্য খাবার রেডি করতে চলে গেলেন তিনি।
-----------------------------
ক্লাসে না গিয়ে ক্যান্টিনে বসে আছে তারা চার বন্ধু। সকলের মাঝে নীরবতা বিদ্যমান। কারো মুখে কোন কথা নেই। সবাই কেমন অসহায় লুক নিয়ে বসে আছে চেয়ারে। ক্যান্টিনে এখন ওরা চারজন ছাড়া আর কেউই নেই। সবাই ক্লাস করতে ব্যস্ত। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে নীরব থাকার পর বলে উঠল তন্ময়,
-- তোরা আমার কথা বিশ্বাস করিস নি তাই না? আমি বলছি শিখা নামের ওই মেয়েটি কোন সাধারণ মেয়ে নয়। ওর মাঝে অবশ্যই কোনো খারাপ শক্তি আছে। নইলে এটা কিভাবে সম্ভব হল। আমাদের কেউই জানিনা আমরা কিভাবে সেই কালো জঙ্গল থেকে বাসায় নিজের বিছানায় ফিরে এলাম। এমনকি বাসার সবাই বলছে আমরা নাকি কাল দুপুরে কলেজ শেষে বাসায় চলে গেছি। অথচ আমরা তেমন কিছুই করিনি। আর যদি আমরা বলি এসব আমাদের স্বপ্ন ছিল! তাহলে চারজন একসাথে কিভাবে একই স্বপ্ন দেখবো বল? এমনকি আঘাতের চিহ্ন গুলোও আমাদের শরীরে আছে। এটা কিভাবে সম্ভব? আমরা অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি ইমন। ওই মেয়েটির সাথে আমাদের এভাবে পাঙ্গা নেওয়া উচিত হয়নি। জানিনা আমাদের কি অবস্থা করবে ওই মেয়েটি। নিশ্চয়ই ও একটি ডাইনি। আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে ও। আমরা আর বাঁচবো না কেউ বাঁচবোনা। সব তোর দোষ ইমন, তোর কারনে আজকে আমাদের এই অবস্থা।
কথাগুলো বলেই ফুঁপিয়ে উঠলো তন্ময়। ওকে এভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখে সবাই ভাবনায় পড়ে গেল। ইমনও কিছু বলছে না ওকে। রেগেও যাচ্ছে না অন্য দিনের মত। কারণ ও নিজেও অনেক ডিপ্রেশনে চলে গেছে এইসব ভাবনা নিয়ে। তখনই ওদের ভাবনায় ছেদ কাটিয়ে পাশ থেকে একটি মেয়েলি কন্ঠ বলে উঠল,
-- আসসালামু আলাইকুম, আকাশ ভাইয়া আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি? আলাদা ভাবে?
মেয়েলি কন্ঠের উৎস কে অনুসরণ করে সে দিকে সবাই ঘুরে তাকালো। আর তাকিয়ে সবার চোখে-মুখে ফুটে উঠল বিস্ময়ের ছাপ। কারণ ওদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে শিখা। চোখে তার অদ্ভুত মায়া কাজ করছে। নীল বর্ণের চোখের মণির যেন ছলছলে একবিন্দু পানির আভা ফুটে উঠেছে। ওর দিকে তাকিয়ে আর ভয় করছে না কারোরই। হঠাৎ আকাশের কি হলো, ও কোন কিছু না ভেবে উঠে দাঁড়িয়ে শিখার পিছু পিছু চলে যেতে লাগলো। আকাশকে শিখার সাথে যেতে দেখে বেশ কয়েকবার পিছু ডাকলো তন্ময় সাগর আর ইমন। কিন্তু কারো ডাকেই সাড়া দিল না আকাশ। ওকে নিয়ে সোজা খালি লাইব্রেরীতে চলে গেল শিখা। তারপর লাইব্রেরীতে দুজন ঢুকেই দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দিল। বাইরে থেকে স্পষ্ট সেসব দেখতে পেল ওরা তিনজন। এখন ওদের কি করা উচিত ওরা কিছুতেই বুঝতে পারছে না। তবে অসম্ভব ভয় করছে আকাশের জন্য। এদিকে লাইব্রেরী কাছে এগিয়ে গিয়ে ওকে ডাকার ও সাহস পাচ্ছে না ওরা। তাই আর কিছু ভাবতে না পেরে সেখানেই চুপ করে দাঁড়িয়ে আকাশের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
লাইব্রেরীর ভেতরে আকাশকে নিজের সামনের চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বিপরীত পাশের চেয়ারে বসে পড়লো শিখা। ওরা বসে পড়তেই যেন আকাশ কোনো ধ্যান থেকে বেরিয়ে আসলো। এতক্ষণ যেন ওর মাঝে কোন হুঁশ ছিলোনা। যখন এসব কিছু খেয়াল হল তখন অনেক বেশি ভয় পেতে লাগল আকাশ। ও বুঝতে পারছে না ও কিভাবে এখানে চলে আসলো শিখার সাথে। আকাশের কপাল থেকে বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়তে লাগল। সেটা বুঝতে পেরে নরম কন্ঠে বলে উঠলো শিখা,
-- দয়া করে আপনি ভয় পাবেন না ভাইয়া! আমি আপনার কোন ক্ষতি করব না। আমি জানি আমাকে ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে আপনার। তবুও বলব প্লিজ আপনি ভয় পাবেন না।
শিখার কথায় নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করল আকাশ। তারপর শার্টের হাতার সাথে কপালের ঘামটা মুছে নিয়ে ঘাবড়ানো গলায় বলে উঠলো,
-- কি বলতে চাও বল? আর আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছো তুমি?
-- সব বলব ভাইয়া আপনাকে সব বলবো বলেই আপনাকে আমি এখানে নিয়ে এসেছি। কিন্তু তার আগে আমাকে দেখে ভয় পাওয়াটা বন্ধ করুন। আপনি যদি এভাবে আমাকে দেখে ভয় পেতে থাকেন তাহলে আপনার কাছে আমি সব কিছু বলতে পারব না। ট্রাস্ট মি আমি আপনাদের কারো ক্ষতি করব না!
কি বলবে কিছুতেই বুঝতে পারছেনা আকাশ। এদিকে ভয় করছে প্রচুর। তবুও মনে সাহস যুগিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিল শিখার দিকে,
-- তুমি আসলে কে বলোতো? তুমি একটি মানুষ হতেই পারো না। কাল আমাদের সাথে যেগুলো ঘটেছে তোমার পিছনে গিয়ে। সেগুলো কোন মানুষের পিছনে যাওয়ার কারনে হতে পারে না। নিশ্চয়ই তোমার মাঝে আলাদা কোনো ব্যাপার আছে। সত্যি করে বলো তুমি কে?#কে_তুমি?
আকাশের কথায় নিশ্চুপে কিছুক্ষণ কান্না করলো শিখা। ওর চোখে পানি দেখে ঘাবড়ে গেল আকাশ। ও এভাবে কেন কান্না করছে কিছুই ওর মাথায় ঢুকলোনা। আকাশ আবারো কিছু বলতে যাবে ওকে থামিয়ে দিয়ে শিখা বলে উঠলো,
-- ভাইয়া আপনি ঠিকই বলেছেন আমি আপনাদের মত সাধারন কোন মানুষ ছিলাম না একসয়। কিন্তু এখন আমি একজন সাধারন মানবী। একদম আপনাদের মত। তবুও আমার মাঝে কিছু আলাদা শক্তি আছে যা আপনাদের মাঝে নেই। আর কাল আপনাদের সাথে যেসব ঘটেছে সেগুলো কোনো বাস্তব ঘটনা নয় সবই আপনাদের স্বপ্ন ছিল। আপনারা আমার পিছু নিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু আমার পিছু পিছু জঙ্গল পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই আপনারা নিজেদের বাড়িতে চলে যান। আর ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখেন বাকিটুকু।
শিখার শেষ কথাটা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো আকাশ। ও মাথা চুলকে নিয়ে বলে উঠল,
-- এসব তুমি কি বলছ? আমি তো তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না? আমরা তোমার পেছনে জঙ্গলে গিয়েছিলাম। আমরা আবার বাসায় কখন ফিরলাম। আর আমাদের যদি ওই সবকিছু স্বপ্নই হবে তাহলে বাস্তবে আমাদের শরীরে এত ব্যথা আর জায়গায় জায়গায় এত ছিলে গেল কিভাবে? আর তুমিই বা আমাদের স্বপ্নের ব্যাপারে কি করে জানো?
একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইল শিখা। তারপর আবার বলতে শুরু করলো,
-- কারন ঐ স্বপ্নগুলো আপনাদের আমি দেখিয়েছি ভাইয়া। আর স্বপ্নের মাঝে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো স্বপ্নের মাঝে হলেও বাস্তবে আপনাদের ওপর তার প্রভাব পড়েছে। আর আপনারা আমার পিছু নিয়ে বাসায় চলে গিয়েছেন কারণ তখন আপনারা সবাই আমার মায়ার ভেতর ছিলেন। সেই মায়ায় পরে আপনারা কোন কিছু বুঝতে পারেননি। তবে আপনার কাছে আমার অনেক হেল্প প্রয়োজন। আমি শুধু আপনাকেই সিলেক্ট করেছি আমায় সাহায্য করার জন্যে। কারন একমাত্র আপনি পারবেন আমাকে সাহায্য করতে।
ভনিতা না করে সবকিছু ঠিকঠিক আমাকে খুলে বল শিখা। আমি তোমার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছিনা। মাথার মধ্যে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে আমার। বুঝতে পারছিনা তুমি আমাকে পথ ভ্রষ্ট করছো নাকি আমাকে কোন বিপদে ফেলার চেষ্টা করছো। সত্যি করে বলো তোমার মতলবটা কি?
-- আমি এই কলেজে একজনের খোঁজে এসেছি ভাইয়া। যাকে খুঁজে চলেছি আমি দীর্ঘ 20 বছর হল। তার জন্য আমার সকল শক্তি হারিয়ে গেছে। তাকে না পেলে আমি হয়তো একসময় এভাবেই মারা যাব। তাকে যেভাবেই হোক আমার চাই। আর তাকে খুঁজে বের করতে সাহায্য করবেন আপনি আমায়। কেননা আমি যখন স্বপ্নে আপনাদের সকলকে পরীক্ষা করছিলাম তখন সকলের মাঝে আপনাকেই আমার মনে হয়েছে যে আপনি খুব বুদ্ধিমান এবং সাহসী ছেলে। তাই আপনিই পারবেন আমায় সাহায্য করতে।
শিখার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রইল আকাশ। তারপর বোঝার চেষ্টা করল শিখা আসলে ওকে কি বলতে চাইছে। বেশ কিছুক্ষণ ভাবার পরেও যখন কোন কিছু খুঁজে পেল না। তখন শিখার দিকে তাকিয়ে বলল,
-- ঠিক আছে আমি তোমাকে সাহায্য করতে রাজি। যদিও জানিনা কি ব্যাপারে তোমাকে সাহায্য করতে হবে। তবে যতটা সম্ভব আমি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে তোমায় সাহায্য করব। কিন্তু তার আগে সবকিছু আমাকে বুঝিয়ে বলো। আমি তোমার কথা কোন কিছুই বুঝতে পারছি না। মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে আমার।
আকাশের কথা শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর আকাশের কাছে সব কিছু খুলে বলল শিখা। সবকিছু শুনে যেন আকাশ হতভম্বের মত তাকিয়ে রইল ওর দিকে। ওর যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এতসব ঘটনা। তার পরেও সবকিছু মেনে নিল আর শিখাকে কথা দিল ও শিখাকে সাহায্য করবে। শিখা অনেক খুশি হল আকাশের সহযোগিতা পাবে বলে। তারপর আকাশ বেরিয়ে আসলো লাইব্রেরী থেকে। ওকে লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে দৌড়ে ওর কাছে এসে দাঁড়াল ওর তিনজন বন্ধু। ওদের এভাবে তেড়ে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করল আকাশ,
--কিরে এমন ছাগলের মত তিনজন দৌড়ে আমার কাছে আসলি কেন? আমি কি তোদের জন্য কাঁঠালের পাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছি?
আকাশের এমন উদ্ভট কথা শুনে রাগ উঠে গেল ইমনের। আকাশের মাথায় গাট্টা মেরে বলে উঠলো,
-- শালা আমরা এখানে তোর চিন্তা করে মরে যাচ্ছি। আর তুই এসব কি বলছিস? ঐ মেয়েটা কই তুই বের হলি এটা শিখা কোথায়?
কথাটা বলেই আকাশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দৌড়ে লাইব্রেরীর মধ্যে ঢুকে গেল ইমন। কিন্তু লাইব্রেরীটা পুরাই ফাঁকা সেখানে কেউ নেই। লাইব্রেরীটা ফাঁকা দেখে বেশ অবাক হলো ইমন। বাইরে বেরিয়ে এসে আকাশ কে বলল,
-- কিরে আকাশ তুই একা বের হলি কিন্তু শিখাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না কেনো? ও তো তোর সাথেই লাইব্রেরীতে ছিলো?
ইমনের প্রশ্নে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল আকাশ। তারপর ধমকের সুরে বলে উঠলো,
-- আচ্ছা তোরা কি দুদিন হল সব উদ্ভট স্বপ্ন দেখিস নাকি বলতো? শিখা কোথায় আমার সাথে আসলো? আমি তো একটা বই খুঁজে বের করবো বলে একা একাই লাইব্রেরীতে গিয়েছিলাম। এসব ফাউল কথা বাদ দিয়ে চল ক্লাসে গিয়ে বসি। শেষ ক্লাসটা অন্তত করতে দিবি নাকি?
কথাটি বলে আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ক্লাসের দিকে হাঁটা দিল আকাশ। ওর এমন কথা শুনে তিনজনেই অবাক হয়ে গেল।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
জানি গল্পটা পড়ে সকলের মাথা ই হেং হয়ে যাচ্ছে। আর এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক এটা অস্বাভাবিক এর কিছু নয়। কেননা গল্পটার রহস্যটাই এমন। তবে যখন সব রহস্যগুলো খুলবে তখন সবাই সবকিছু সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন। তবে রহস্য টা খুলতে একটুখানি সময় লাগবে। গল্পটা বেশি বড় নয় খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। সবাই একটু ধৈর্য ধরে পড়বেন আশা করি। ধন্যবাদ