প্রখরের ঠোঁটে চুমু খেয়ে দৌড় দিল বিনু। আকষ্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেল প্রখর। সমস্ত শরীর তড়িৎ গতিতে কেঁপে উঠল। আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। প্রখর সামনের দিকে বিনুকে দৌড়ে যেতে দেখে তিয়াসার দিকে দৃষ্টিপাত করল প্রখর। তিয়াসা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। প্রখর উত্তপ্ত মস্তিষ্ক নিয়ে বাড়ির দিতে অগ্রসর হতেই তিয়াসা প্রখরের হাত চেপে ধরল

 “প্রখরের ঠোঁটে চুমু খেয়ে দৌড় দিল বিনু। আকষ্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেল প্রখর। সমস্ত শরীর তড়িৎ গতিতে কেঁপে উঠল। আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। প্রখর সামনের দিকে বিনুকে দৌড়ে যেতে দেখে তিয়াসার দিকে দৃষ্টিপাত করল প্রখর। তিয়াসা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। প্রখর উত্তপ্ত মস্তিষ্ক নিয়ে বাড়ির দিতে অগ্রসর হতেই তিয়াসা প্রখরের হাত চেপে ধরল


। সে মুখশ্রীতে অসহায়ত্ব ফুটিয়ে বলল,


“ভাইয়া বিনুর কোনো দোষ নেই। তুমি বাসায় গিয়ে বিনুর বাবা-মাকে কিছু বলো না। বিনুর বাবা-মা এই বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নিবে না।”


“হাতটা ছাড় তিয়াসা।” ভাইয়ের শীতল কণ্ঠে বলা কথাটা তিয়াসার হৃদয় স্পর্শ করে গেল। সে ধীর গতিতে নিজের হাত সরাতে শুরু করল। প্রখর কোনো বাক্য উচ্চারন না করে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। সামিয়া চৌধুরী ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে ছিল। তখনই প্রখর গম্ভীর হয়ে সামিয়া চৌধুরীর সামনে বসলো। সামিয়া চৌধুরী ফোন রেখে প্রখের দিকে দৃষ্টিপাত করল। মুখশ্রীতে এক টুকরো সুখ আলোড়ন ছড়িয়ে পড়েছে। সামিয়া চৌধুরী হাসোজ্জল মুখশ্রী করে বললেন,


“প্রখর কিছু বলবে বাবা?”


“একটা পুরুষ মানুষকে কিভাবে চুমু খেতে হয়। সেটা কানাডা থেকে মেয়েকে শিখিয়ে দিয়ে আসছেন মামনি?” প্রখরের কথায় আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘ এসে সামিয়া চৌধুরীর মুখশ্রীতে ধরা দিল। সামিয়া চৌধুরী বিনুর দিকে দৃষ্টিপাত করল। বিনু মলিন মুখশ্রী করে কামিনী সিকদারের পাশে বসে আছে। বিনু মায়ের দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলল,


“একটু পরে নাটক শুরু হবে জানো প্রজাপতি। সেই নাটকের দুঃখীনি হব আমি। যাকে কোনো বাঁধা ছাড়াই গায়ে হাত তোলা যায়। কিছু সময়ের ব্যবধানে আমি হসপিটালেও থাকতে পারি। খুব তাড়াতাড়ি দেশ ছাড়তে পারি। আবার মরেও যেতে পারি। তুমি কিন্তু আমায় ভুলে যেও না প্রজাপতি। আমি তোমাকে ভিষণ ভালোবাসি।” বিনুর কথায় কামিনী সিকদার অদ্ভুত ভাবে বিনুর দিকে দৃষ্টিপাত করল। কামিনী সিকদারের দৃষ্টি বলে দিচ্ছে। বিনুর কথার অর্থ তার বোধগম্য হয়নি। বিনু খুব দ্রুত পরোটা নিয়ে খেতে লাগলো। 


“এসব তুমি কি বলছ!”


“যে দেশে মেয়েকে মানুষ করেছেন। মেয়েটা নষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। আমিই খামখা বিচার দিতে এসেছি। থাকেনই নষ্টামিতে ভরপুর দেশে।”


“বিনু কি করেছে?”


“আপনার মেয়ে জনসম্মুখে আমার ঠোঁটে চুমু খেয়েছে।” প্রখরের শেষ বাক্যটা সামিয়া চৌধুরীর সমস্ত শরীরের আগুন জ্বালিয়ে দিল। ভালো মানুষির খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসলেন তিনি। হুংকার ছেড়ে বিনুকে ডাকলেন বিনু পানি খেয়ে তড়িঘড়ি করে মায়ের সামনে এসে উপস্থিত হলো। 


“তুই নাকি প্রখরের ঠোঁটে চুমু খেয়েছিস?”


“হ্যাঁ আম্মু।”


“কেন?”


“এমনিতেই।”


“নাকি কারো সাথে বাজি ধরেছিস?”


“এক কথা বারবার বলতে ভালো লাগে না আম্মু।” বিনুর কথা শেষ হবার সাথে সাথে কামিনী সিকদার বিনুর গালে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। বিনু চুল টেনে বলল,


“এতটুকু বয়সেই বাবার মতো চরিত্রহীন হয়ে গিয়েছিস। দিন দিন বে*শ্যা তৈরি হচ্ছিস। বাপ একটা নষ্ট পুরুষ তার মেয়ে একটা নষ্টা নারী হবে। এটাই তো স্বাভাবিক। তোর নষ্টামি করতে ইচ্ছে করছে। তুই কানাডা গিয়ে করতি। তুমি কেন আমার বান্ধবীর ছেলেকে চুমু খাবি? তুই কি সবাইকে নিজের মতো নষ্ট মনে করিস? আমি ভালো থাকতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু আমাকে ভালো থাকতে দিলি না। তোকে আজ আমি খুন করে ফেলব জা*নো*য়া*রে*র বাচ্চা।” কথা গুলো বলেই নিজের কক্ষে গেল সামিয়া চৌধুরী। ঝড়ের গতিতে গিয়ে তুফানের গতিতে ফিরে আসলো। সামিয়া চৌধুরী হাতে বাঁশের একটা মোটা অংশ। ততক্ষণে তিয়াসা এসে বাসায় উপস্থিত হয়েছে। সামিয়া চৌধুরী তিয়াসার হাত ধরে বলল,


“বিনুকে মারবে না মামনি। বিনু আমার কথায় ভাইয়াকে চুমু খেয়েছে। তোমার যদি মারতে ইচ্ছে হয়। তাহলে তুমি আমাকে মারো।” সামিয়া চৌধুরী নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। সে তিয়াসাকে ধাক্কা দিয়ে বিনুকে মারতে শুরু করল। অদ্ভুত বিষয় বিনু আর্তনাদ করছে না। যখন আঘাতটা একটু বেশি লাগছে। তখনই মৃদু আর্তনাদ করে উঠছে। অমানুষের ন্যায় বিনুকে আঘাত করছে সামিয়া চৌধুরী। কামিনী সিকদার বাঁধা দিতে আসলে দু'টো বাড়ি তার হাতেও লেগে যায়। এতে প্রখর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে রাগে গর্জন করে বলল,


“মেয়েকে শাসন দেখাবেন নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে দেখান। আপনি কোন সাহসে আমার মায়ের গায়ে হাত তুলেন?” সামিয়া চৌধুরী প্রখরের কথায় উত্তর না দিয়ে বিধস্ত বিনুকে টেনে তুলল। বিনুকে তুলতে গিয়ে বিনু হাতার অংশে টান গেলে ছিঁড়ে গেল। নিজের কক্ষে এসে দরজা বন্ধ করে দিল। আঘাতের মাত্রা সময়ের সাথে প্রকোপ হতে শুরু করল। আবদ্ধ কক্ষের ভেতর থেকে বিনুর হৃদয় ভাঙা চিৎকার ভেসে আসছে। তিয়াসা আর কামিনীকে আঁটকে রেখেছে প্রখর। এমন বেয়াদব মেয়ের এতটুকু শাস্তি পাওয়ারই যোগ্য। সামিয়া চৌধুরী যেন দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ আজকে পুষিয়ে নিচ্ছে। 


“আমাকে আর মেরো না আম্মু। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমার জানটা এখনই বের হয়ে আসবে।” মেয়ের আর্তনাদ সামিয়া চৌধুরীর কর্ণ পর্যন্ত পৌঁছাল না। বিনুর মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হতে শুরু করেছে। সমস্ত শরীর নেতিয়ে পড়েছে। কণ্ঠ স্বর নিস্তেজ হতে শুরু করেছে। তখনই জাবেদ চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করেন। মেয়ের নিস্তেজ কণ্ঠ স্বর কর্ণকুহরে আসতেই ছুটে গেল কক্ষের দিকে। আকষ্মিক ঘটনায় আহেব সিকদার অর্ধাঙ্গিনীর দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। প্রখর ততক্ষণে নিজের কক্ষে গিয়ে দরজা দিয়েছে। জাবেদ চৌধুরী রাগান্বিত হয়ে বলল,


“এই বে*শ্যা তুই যদি আমার মেয়ের শরীরে আর একটা আঘাত করেছিস। তাহলে তোকে আমি জ্যান্ত পুতে ফেলব শালী।” কথা গুলো বলছে আর অনবরত গালি দিয়েই যাচ্ছে জাবেদ চৌধুরী। প্রখর একটা চাবি জাবেদ চৌধুরীর মুখশ্রীর সামনে ধরল। সেটা পেয়েই জাবেদ চৌধুরী দ্রত দরজা খুলল। বিনুর নিথর দেহটা ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে আছে। মার খেতে খেতে জ্ঞান হারিয়েছে সে। ফ্লোরের চারিদিকে রক্তে মাখামাখি হয়ে গিয়েছে। মেয়ের করুন অবস্থা দেখে জাবেদ চৌধুরী নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে সজোরে লাথি মারল। সামিয়া চৌধুরী যেন আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। অচেতন মেয়ে শরীরেই দু'টো লাথি মারল। তা দেখে প্রখরের ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠল। জাবেন সামিয়ার দিকে অগ্রসর হতেই আহেব সিকদার বাঁধা দিয়ে বলল,


“আমরা এসব বিষয়ে পরে কথা বলছি। মেয়েটাকে আগে হাসপাতালে নিতে হবে। প্রখর তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করো।” পৃথিবীতে বাবা নামক মানুষটাকে মনে প্রাণে সন্মান করে প্রখর। সেজন্য বাবার বলার বাক্যটা বিষাক্ত মনে হলেও অমৃত মনে করে গ্রহণ করে নিল প্রখর। সে দ্রুত গাড়ি বের করতে চলে গেল। 


নিজের গার্লফ্রেন্ড সাথে লিপকিসে মগ্ন ছিল আসফি। সে গভীর ভাবে তার গার্লফ্রেন্ডকে স্পর্শ করে যাচ্ছে। সে ঠোঁট ছেড়ে গলায় নেমে আসছে। প্রিয়তমার গলায় ছড়িয়ে দিচ্ছে ঠোঁটের উষ্ণতা। রিমির কোমড় জড়িয়ে নিজের আরো কাছে টেনে নিয়ে আসল আসফি। রিমি শক্ত হাতে আসফিকে আঁকড়ে ধরে আছে। তখনই আসফির মুঠোফোনটা বেজে উঠে। এতে বিরক্ত হয় আসফি। সে ফোনের দিকে তাকিয়ে প্রখরের নামটা দেখেই ধাক্কা দিয়ে রিমিকে দূরে সরিয়ে দেয়। এতে রেগে যায় রিমি। সে রক্তিম চোখে আসফির দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। 


“ফোন দেওয়ার আর সময় পেলি না শা'লা? আমার রোমান্টিক মুহূর্তের বারোটা বাজিয়ে দিলি!”


“তোকে হসপিটালের আসতে হবে।”


“আমি এখনই আসছি।” কথা গুলো বলেই আসফি তড়িঘড়ি করে বের হয়ে গেল। প্রখরসর তারা চার বেস্ট ফ্রেন্ড। একজন আরেজ জনের জন্য জীবন দিয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করবে না। এই প্রখর আসফিকে ডাকলো। আসফির যতই গুরুত্বপূর্ণ কাজ হোক কেন? সে সব কাজ ফেলে প্রখরের কাছে চলে যাবে। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। সে ঝড়ের গতিতে হসপিটালে এসে উপস্থিত হলো। আসফি হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,


“তুই ঠিক আছিস প্রখর? কার জন্য হসপিটালে এসেছিস?”


“একটা মেয়ে।” প্রখরের কথায় আসফি বিস্ময় নয়নে প্রখরের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। একটা মেয়ের জন্য প্রখর হসপিটালে ধৈর্য ধরে বসে আছে। এটাও বিশ্বাস যোগ্য!


“ধুর শা*লা আমি ভাবলাম কার না নাতে কার কি হয়েছে। শুধু শুধু রোমান্টিক মুহূর্ত নষ্ট করে তোর কাছে এলাম। আজকে রিমি নিয়ে রুমডেটে গিয়েছিলাম। তোর জন্য এবারের টাও পরিপূর্ণ ভাবে করতে পারলাম না।”


“এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যা।”


“আমাকে রোমান্স করতে দিসনি। এখন তোকে চুমু খেয়ে প্রেগন্যান্ট বানিয়ে দি শা*লা।” প্রখর জবাব দেয় না। গম্ভীর মুখশ্রী করে সামনে দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। আসফি একটা নার্সের দিকে তাকিয়ে আছে। নার্সটা ফোনে কথা বলছে। আসফি তাকানোতে সে-ও আসফির একটু কাছে এগিয়ে আসলো। 



Post a Comment (0)
Previous Post Next Post