কিছুক্ষণ আগে আমাকে আংটি পড়িয়ে আদ্ররা চলে গেছে। বিয়ের ডেটটাও ফিক্সড করে গেছে আগামী মাসেই বিয়ে। যদিও আমি এখনি বিয়ে করতে চাই নি কিন্ত আদ্র আগেই সবাইকে বলে দিয়েছে আমি তাদের ডেট অনুযায়ী বিয়ে করতে রাজি আছি


 

কিছুক্ষণ আগে আমাকে আংটি পড়িয়ে আদ্ররা চলে গেছে। বিয়ের ডেটটাও ফিক্সড করে গেছে আগামী মাসেই বিয়ে। যদিও আমি এখনি বিয়ে করতে চাই নি কিন্ত আদ্র আগেই সবাইকে বলে দিয়েছে আমি তাদের ডেট অনুযায়ী বিয়ে করতে রাজি আছি। সবাই তো অনেক খুশি হয়েছে আমার রাজি হওয়ার কথা শুনে। তাই বিয়ের ডেটও ঠিক করে ফেললো।আমি কিছু বলতে চাইলে আদ্র বলতে দেয়নি। উনি আমাকে চোখের ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে এখন যদি কোনো এলোমেলো করি তাহলে আমার ১২টা বাজাবেন। কি আর করা বাধ্য হয়েই রাজি হতে হলো। মাঝে মাঝে ভাবি আমি কেনো এই রাগি হনুমানটাকেই ভালোবাসলাম।


মনিকা তো বিয়ের কথা শুনে খুবই এক্সাইটেড। ও কবে আসবে কি কি শপিং করবে। গায়ে হলুদে বিয়েতে বউভাতে কিরকম ড্রেস পড়বে কিভাবে সাজবে। এসব বলে বলে আমার মাথার পোকা গুলো বের করে দিচ্ছে। আর এদিকে আমার হবু ননদিনী অথই তো আছেই ও সেই মনিকার দলেরই। এক কথায় দুটোই বাচাল। আমাকে এই বয়সে পাগল বানানোর জন্য এই দুইটা মেয়েই যথেষ্ট। উফ অসহ্য। 


ইউটিউবে নাটক দেখছি তখন ম্যাসেনজার টন বেজে উঠলো। অথই মেসেজ করেছে


____হাই ভাবি, কি করছো?


এই আবার শুরু হলো ভাবি বলা এই মেয়েকে কতবার বলেছি আপু বলে ডাকতে সে শুনবেই না। ঠিকআছে আমিও কম কিসে আমিও ভাবি বলবো হা হাহা।

আমি রিপ্লে করলাম


____নাটক দেখছি গো ভাবি, তুমি কি করছো?


আমি এই মেসেজটা দেওয়ার পর অথই অবাক হওয়ার ইমুজ দিলো। তারপর আর মেসেজ করেনি কল দিলো আমি রিসিভ করতেই ও বললো


____আরিশা আপু তুমি ভাবি বলছো কাকে!!


____কাকে আর ভাবি বলবো তোমাকেই বলেছি। তুমিও তো আমার ভাবি হবে তাইনা? 


____ধুর আপু কি বলছো তুমি প্লিজ ভাবি বলবে না।


____কেনো বলবো না হুম তোকে আমি কতবার বলেছি আমাকে ভাবি বলবি না। কিন্তু তুই সেটাই বলিস তাই আমিও ঠিক করেছি তোকে ভাবিই বলবো সাদাফ ভাইয়ার গার্লফ্রন্ড বলে কথা। একসময় সাদাফ ভাইয়ার বউ ও হবি। আহা কি আনন্দ,তুই আমার ননদ থেকে ভাবি হয়ে যাবি। এই তোকে আবার আপনি করে বলতে হবে নাকি? আমি ওটা পারবো না বলে দিলাম আমি তুই করেই ওকে?


____আপু আপু প্লিজজ থামো কি সব বলে যাচ্ছো। এখন তো আপু বলেছি আর ভাবি বলবো না তুমি দয়া করে এসব বলো না। 


____কেনো বলবো না হুম লজ্জা লাগছে বুঝি?


____কি যে বলোনা লজ্জা লাগবে কেনো। আচ্ছা আপু শোনোনা আমি কি তোমাকে কখনোই ভাবি ডাকতে পারবো না? 


____হুম পারবি তবে এখন নয় বিয়ের পরে বলবি।


____ইয়েয়, থ্যাংক ইউ আপু। আমি তো ভেবেছিলাম আপু বলেই ডেকে যেতে হবে ভাবি ডাকার আশা পূরন হবে না।


  .


আব্বু আম্মু আমি ডিনার করছি। আব্বু খেতে খেতে বললো

____মামনি আদ্রর সাথে কথা হয়েছে তোমার? 


____দুপুরে কথা হয়েছিলো অফিসে নাকি বিজি আছে তাই আর ফোন দেয়নি। 


____ও আচ্ছা তাহলে তো ও তোমাকে কিছু বলেনি। আদ্রর মা একটু আগে ফোন দিয়েছিলো কাল বিকেলে তোমাকে ওদের বাসায় যেতে বলেছে। তারপর নাকি তোমাকে নিয়ে ওরা শপিং এ যাবে।


____আমাকে কেনো যেতে হবে আব্বু। আমি যাবো না।


আম্মু বললো

____আরিশা যাবি না কেনো তুই,আদ্রর মা নিজে ফোন দিয়ে বলেছে না গেলে মন খারাপ করবে। এমন তো না তুই ওদের কাউকে চিনিস না সবাইকে তো চিনিস তাহলে যেতে প্রবলেম কোথায়?


____কোনো প্রবলেম নেই আম্মু এমনিতেই।


____আদ্রর কাছে বকা খাওয়ার ইচ্ছে থাকলে বলিস যাবো না। তোকে একমাত্র আদ্রই পারবে সোজা করতে। ছেলেটা কতো ভালো এমন ছেলে এখনকার দিনে কমই দেখা যায়।


আমি আম্মুর দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। এটা কি আমার আম্মু নাকি আদ্রর?  এখনো বিয়ে হয়নি তার আগেই আদ্র আম্মুর মনে জায়গা করে নিয়েছে! ভাবা যায়!


  .


আন্টি অথই আমি শপিং এ এসেছি। পুরো শপিংমল ঘুরে ঘুরে অনেক শপিং করলাম। তারপর জুয়েলারির দোকানে যাবো তখন আন্টির ফোনে আদ্র ফোন দিতে আন্টি উনাকে বললো জুয়েলারির দোকানে আসতে। উনাকে আবার আসতে হবে কেনো বুঝিনা আমরা ৩ জনে মিলে তো ভালোভাবেই শপিং করছি।


জুয়েলারির দোকানের সামনে যেতেই দেখলাম আদ্র আর সাদাফ ভাইয়া দাড়িয়ে আছে। আমাদের দেখেই আদ্র এগিয়ে এসে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো তারপর আন্টিকে বললো


____মা তোমাদের শপিং কমপ্লিট আর কিছু বাকি আছে কি?


____না সব কেনাকাটা হয়ে গেছে এখন শুধু জুয়েলারিটা বাকি আছে।


____আচ্ছা ভেতরে চলো।


আন্টি অথই সাদাফ ভাইয়া আগে আগে দোকানে ঢুকে গেলো। আদ্র আমার পাশে এসে বললো

____আজ হঠাৎ বোরকা ছাড়া বের হয়েছো কেনো? হিজাব ও পড়োনি তুমি তো বোরকা হিজাব ছাড়া কেথাও যাও না।


বোরকা হিজাব পড়িনি বলে আদ্র রাগ করেছে নাকি?হুম হতেও পারে। আমি উনার দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বললাম


____বোরকা পড়েই এসেছিলাম আপনাদের বাসায়। অথই খুব জোর করছিলো বোরকা ছাড়া আসতে। আর আন্টিও বললো শপিং করতে অনেক সময় লাগবে প্রচুর গরম তাই পড়িনি। এর পর থেকে আর কোথাও বোরকা ছাড়া বের হবো না। আপনি রাগ করবেন না প্লিজ।


আদ্র মুচকি হেসে বললো

____আরু তুমি কি ভাবছো আমি রেগে বলেছি? না পাগলী আমি একটুও রাগ করে কিছু বলিনি। আসলে তোমাকে তো বোরকা না পড়লেও হিজাব ছাড়া কখনো বের হতে দেখিনা তাই বললাম। 


আমি মনে মনে খুশি হলাম আদ্রকে যতোটা রাগি ভেবেছিলাম উনি ততোটাও রাগি নয়। অযথাই বেশি বুঝি আমি। আমাকে উনি ভালোবাসে কয়েকদিন পর বিয়ে দোষ করলে তো বকবেই এটাই স্বাভাবিক।


দোকানে জুয়েলারি দেখছি আর আড়চোখে সাদাফ ভাইয়া অথইকে দেখছি। আহা,কি প্রেম! দুজনে চোখে চোখে কথা বলছে। সাদাফ ভাইয়াও যে এমন হতে পারে ভেবেই অবাক হই। যে মেয়েদের সাথে কথাই বলতে চাইতো না সে আজ প্রেম করছে, বাহ!


অথই আমার পাশেই ছিলো আমি ওর কানে কানে বললাম

____আমার বনুটা দেখছি কারো সাথে চোখের ইশারায় কথা বলতে ব্যস্ত। এখানে যে আরো কেউ আছে সেদিকে কি খেয়াল আছে তোদের?


অথই থমথম খেয়ে বললো

____আপু তোমার চোখদুটো দেখছি সিসি ক্যামেরার থেকে কম না। সব কিছুতেই নজর আছে।


____নজর তো একটু আধটু রাখতেই হয় তাইনা ননদিনী?


____এই তোরা দুজনে ফিসফিসিয়ে কি কথা বলছিস। যতোকথা আছে বাসায় গিয়ে বলিস। আরিশা মা গহনাগুলো দেখ।


আন্টির কথায় আমি গহনা দেখতে লাগলাম।

রাত আটটা বেজে গেছে আম্মু ফোন দিচ্ছে বারবার। আন্টিকে বললাম


____আন্টি সব কেনাকাটা তো শেষ,আম্মু ফোন দিচ্ছে আমি বরং বাসায় চলে যাই।


____রাত হয়ে গিয়েছে তুই একা যাবি কি করে আদ্র পৌছে দিয়ে আসবে তোকে।


  .


সাদাফ ভাইয়া আদ্রকে বলেছে আন্টি আর অথইকে সে পৌছে দেবে। অথই যেখানে সাদাফ তো সেখানে থাকবেই। সাদাফ ভাইয়া আন্টি অথইকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। আমি আর আদ্র বাইরে এসে গাড়িতে উঠতে যাবো তখন মেয়েলি কন্ঠে কেউ আদ্রর নাম ধরে ডাকলো। আমরা দুজনেই ঘুরে তাকাতে একটা মেয়ে মুখে হাসি ঝুলিয়ে আদ্রর সামনে এসে দাড়ালো। আদ্র অবাকভঙ্গিতে বললো


____আরে রাফিয়া তুই! দেশে ফিরলে কবে?


____এইতো এক সপ্তাহ হলো এসেছি। তুমি তো দেশে এসে আমাকে ভুলেই গিয়েছো আদ্র। একবার তো ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নিতে পারতে।


____আসলে রাফিয়া তোর নাম্বারটা ডিলিট হয়ে গিয়েছে তাই আর ফোন দিতে পারিনি। ফেসবুকেও তোর আইডি খুঁজেছি পাইনি।


____হুম বুঝলাম,আগে তোমার ফোন নাম্বারটা দাও তারপর কথা বলি।


আদ্র নিজের ফোন নাম্বার দিলো মেয়েটিকে।

আমি নিরব দর্শক হয়ে দুজনের কথা শুনছি আর ভাবছি কে এই মেয়ে আদ্রর সাথে কি সম্পর্ক ওর? দুজনের কথা শুনে তো মনে হচ্ছে ওরা একে ওপরকে ভালো করেই চেনে। আমি মেয়েটির মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে নিলাম, পড়নে জিন্স আর শর্ট টপস গলায় স্কার্ফ পেচানো,এভাবে স্কার্ফ পেচানোর থেকে না নেওয়াটাই ভালো। বুকের পুরোটুকু দৃশ্যমান শুধু শুধু ওটা গলায় পেচিয়ে কি লাভ।চুলে ব্রাউন কালার করা ঘাড় পর্যন্ত ছোট করে কাঁটা চুলগুলো। এ তো দেখছি পুরোই মর্ডান মেয়ে,উহু শুধু মর্ডান বললে ভুল হবে ওভার মর্ডান। এমন একটা মেয়ের সাথে আদ্র হেসে হেসে কথা বলছে দেখে রাগ উঠে যাচ্ছে আমার।


মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে আদ্রকে জিজ্ঞেস করলো

____আদ্র তোমার সাথে মেয়েটি কে?


আদ্র আমাকে একহাতে জড়িয়ে হাসিমুখে বললো

____তোকে আরিশা নামের যে মেয়ের কথা বলেছিলাম ওই সে,ওকেই আমি ভালোবাসি। আগামী মাসেই আমাদের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। রাফিয়া তোকে কিন্তু আসতেই হবে বিয়েতে।


রাফিয়ার মুখের গড়নটা পাল্টে গেলো আমার দিকে বাকা চোখে তাকিয়ে একটু হেসে বললো

____আদ্র আমি তো ভাবিও নি তোমার সাথে দেখা হলে এমন একটা সারপ্রাইজ পাবো। আচ্ছা শোনোনা আমার একটা কাজ আছে যেতে হবে।


____ওকে,সময় করে বাসায় আসবি কেমন।


রাফিয়া হুম বলে চলে গেলো। আমি আদ্রকে বললাম

____মেয়েটি কে? দেখে তো অনেক মর্ডান মনে হলো এমন মেয়ের সাথে কি রিলেশন আপনার? 


____আরু ওর নাম রাফিয়া আমি যখন কানাডাতে থাকতাম তখন ওর সাথে আমার পরিচয় হয়েছে আমরা সেম ব্যাচে ছিলাম। আমরা দুজনেই বাংলাদেশি তাই ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেছিলো। রাফিয়া মর্ডান ভাবে চলাফেরা করে ঠিকি কিন্তু বন্ধু হিসেবে মেয়েটি খুবই ভালো।


____ওহ তাহলে আপনি ওকে তুই করে বললেন ওই মেয়েটি কেনো তুমি করে বলছিলো?


____ওর নাকি তুই করে বলতে ভালো লাগে না তাই তুমি করেই বলে। বাদ দাও তো রাত হচ্ছে গাড়িতে ওঠো।


গাড়িতে বসে রাফিয়া নামের মেয়েটির কথা মাথায় ঘুরছে। আদ্র যখন বললো আমাদের বিয়ের কথা তখন ওর মুখটা কেমন কালো হয়ে গেলো। আবার আমার দিকে তাকানোটাও ভালো লাগলো না। মেয়েটিকে আদ্র যেমন বন্ধু বলে মনে করে ওই মেয়েটিও কি সেটাই মনে করে? নাকি অন্য কিছু? ধুর আমি এসব কি ভাবছি অনেকদিন পর দেখা হয়েছে তাই হয়তো আদ্র বিয়ে করছে শুনে অবাক হয়েছে।

  .

🖤

  .


#চলবে.......

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post