বাড়িতে আজ সবার হাসি হাসি মুখ।আম্মু, বড় আম্মু সবাই রান্নাঘরে এটা সেটা রান্না করতে ব্যস্ত।আজ যে বাড়ির দুই ছেলে বাড়িতে পদার্পন করছে

 বাড়িতে আজ সবার হাসি হাসি মুখ।আম্মু, বড় আম্মু সবাই রান্নাঘরে এটা সেটা রান্না করতে ব্যস্ত।আজ যে বাড়ির দুই ছেলে বাড়িতে পদার্পন করছে


।বড় চাচ্চুর ছেলে নিভ্রান ভাইয়া আর ছোটো চাচ্চুর ছেলে শুভ্র ভাইয়া দুইজনই বিদেশ থেকে ডাক্তারি পড়ে একেবারে চলে আসছেন।আজ পাঁচ বছর পর তাদের আবার দেখবো। কিন্তু দুইজনের কারো চেহারা-ই আমার মনে পড়ে না।শুধু এইটুকু মনে পরে শুভ্র ভাইয়া আমার জম শত্রু।তার সামনে থাকার ভয়ে সকাল থেকে রুমের দরজা আটকে বসে আছি।কেউ দরজায় কড়া নাড়লে পড়ছি বলে চালিয়ে দিচ্ছি।সবাই জানে আর দু সপ্তাহ পর আমার এসএসসি পরিক্ষা।তাই এখন কেউ বিরক্তও করতে আসবে না।

কিন্তু এতক্ষন ঘরে বসে থেকে কি করবো তাই ভাবছি।এখন একটা ফোন না থাকার বিরাট আফসোস হচ্ছে।আব্বুকে অনেকবার বলেছি যে ফোন কিনে দিতে।কিন্তু আমার আব্বু তো আব্বুই।তিনি খুবই স্ট্রিক মানুষ। তিনি চাননা নিজের সম্মানে বিন্দু মাত্র দাগ লাগুক।আর তার কথা হচ্ছে ফোন দিলেই নাকি আমরা নষ্ট হয়ে যাবো।পড়ালেখা করবো না।আপুকে ফোন কিনে দিয়েছিলো ভার্সিটি উঠতে।সেখানে আমি মাত্র এসএসসি দিব!


দরজায় কেউ অনবরত কড়া নাড়ছে।আর ঢেকে চলেছে,

--' সিরা আপু দরজা খুলো, আমি ঢুকবো। '


চলে এসেছে আমার চা*মচা ইভান।ছোটো চাচ্চুর ছেলে।সবে ক্লাস ওয়ানে পড়ে।আমার নাম পুরোটা নাকি তার মুখে আসে না।তাই ইয়াসরা নামটাকে সে সিরা বলে চালিয়ে দেই।

দরজাটা খুলে ওকে ভিতরে ঢুকিয়ে আবার বন্ধ করে দিলাম।ওর হাতে ছোট আম্মুর মোবাইল দেখেই নেচে উঠলাম। তার মানে এখন গেম খেলে সময় কাটানো যাবে।শুরু করে দিলাম দুইজন মিলে ছক্কা খেলা।মোবাইলে ছক্কা খেলতে তেমন মজা লাগে না।এইখানে একটু চুরিও করা যায় না।তবুও সময় কাটাতে খেলা শুরু করলাম।


_________


চোখের উপর রোদের আলো পড়াই ঘুম ভাঙল আমার।কাল ইভান খেলা শেষ করেই চলে গিয়েছিলো।দরজা বন্ধ করে আমিও আর কিছু না ভেবে ঘুমের প্রস্তুতি নিয়ে শুয়ে পড়লাম।

জানালার গ্লাস বেধ করে তীব্র আলোর তেজ চোখে মুখে পড়ছে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম সকাল পাঁচটা বাজে।তার মানে গোটা একদিন একরাত ঘুমিয়ে ছিলাম আমি!

আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। ওযু করে বের হয়ে নামাজ আদায় করে নিলাম।

বাড়ির সবাই হয়তো নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।আমার আর ঘুমাতে ইচ্ছে করলো না।গুটিগুটি পায়ে রুম থেকে বের হলাম।ভাইয়ারা রাতেই এসেছেন মনে হয়।তাহলে এখন নিশ্চিত নাক ঢেকে ঘুমাচ্ছেন উনারা।

খুব খিদে পেয়েছে আমার।কাল সকালে নুডুলস খেয়েই

দরজা বন্ধ করেছিলাম।পেটে আর এই পর্যন্ত কিছু পড়ে নি।ফ্রিজ খুলে দেখলাম বাটি আইসক্রিম রাখা।চুপিচুপি আইসক্রিমটা নিয়ে সোফায় বসে পড়লাম। কেউ এখন আমাকে আইসক্রিম খেতে দেখলে এক হালি বকা উপহার দিবে। কিন্তু এখন বকা খাওয়ার সুযোগ নেই।সবাই বেঘোর ঘুম দিচ্ছে।

আমিও আর বেশি কিছু না ভেবে চামচ দিয়ে আইসক্রিম মুখে পুরে চলেছি।আহ কি শান্তি!

কিন্তু আমার এই শান্তি বেশিক্ষণ টিকলো না।একটা অত্যাধিক সুন্দর যুবক ঘুমুঘুম চোখে,উষ্কখুষ্ক চুলে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।আমি এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছি।এত সুন্দর একজন মানুষ কই থেকে আসলো। আহা!

সুদর্শন পুরুষটি পানি খেয়ে আবার হাটা ধরলো।হঠাৎ আমার দিকে তার চোখ পড়লো। থতমত খেয়ে গেলাম আমি।এতক্ষণ পর্যন্ত এই ছেলেটার দিকে আমি হ্যাবলাকান্তের মতো তাকিয়ে ছিলাম!আচ্ছা আমি কি ক্রাশ টাস খেলাম নাকি আবার!

ছেলেটা আমার সামনে এগিয়ে আসছে।তার এগিয়ে আসার সাথে সাথে আমার মনে হলো এর চেহারা আমি আগে কোথাও দেখেছি!কিন্তু মনে করতে পারছি না।সুদর্শন ছেলেটা আমার সামনে এসে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললো,


--' এখনো একই রকম রয়ে গেলি মেহু।এত সকাল কিসের আইসক্রিম খাচ্ছিস,ঠান্ডা লেগে যাবে না!'


বলেই আবার ভাবলেশহীন ভাবে চলে গেলেন।আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।আমার পুরো নাম হচ্ছে ইয়াসরা মেহনাজ। একমাত্র শুভ্র ভাইয়া-ই আমাকে মেহনাজ নামের শর্ট ফর্ম মেহু বলে ডাকতো।সেটা আমার এখনো মনে আছে।তাহলে কি এইটা শুভ্র ভাইয়া ছিলেন!


যেটুকু ক্রাশ খেয়েছিলাম তা মাথা থেকে বের করে ফেললাম।এই ব্যাটার উপর ক্রাশ খাবো তাও আবার আমি!নেহি কাভি নেহি!হুহ!


___________


আপুর রুমে গিয়ে হানা দিলাম।কিন্তু রুমে আপুর সাথে সাথে আরেকজনকে দেখে দিলাম এক চিৎকার। এটা কি দেখলাম আমি!ওহ মাই আল্লাহ!


চলবে কী?


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post