মেঘ অফিসে চলে যায়।মেহু মেঘতাকে পড়িয়ে মেঘতা সহ শাশুড়ির কাছে যায়।

 বউ (১০)


মেঘ অফিসে চলে যায়।মেহু মেঘতাকে পড়িয়ে মেঘতা সহ শাশুড়ির কাছে যায়।


মেঘের মা সোফায় বসে ছিল।মেহু ও পাশে বসে গল্প করে।আর মেঘতা এদিক সেদিক হেটে নিজে নিজে খেলা করে।


মেঘের মা মেহুকে বলে--"মেহু।"

মেহু বলে--"বলুন না আম্মু?"

--"মেঘতার আরেকজন খেলার সঙ্গী আনলে ভালো হতো না?"


মেহু লজ্জা পেয়ে বলে--"আল্লাহ চাইলে অবশ্যই আনবো।"


মেঘের মা খুব খুশি হয়।তারপর মেঘতার সাথে মেঘের মা ও বসে খেলা করে।যেন দুজনেই বাচ্চা।এদের দেখে মেহু হেসে ফেলে তারপর রান্নাবান্না করতে যায়।

.

 রান্নাবান্না শেষে নিজের বাবা মায়ের সাথে কথা বলে।তারা ভালই আছেন।মেহুদের গ্রামের সবাই মিলেমিশে থাকে।এটা মেহুর খুবই ভালো লাগে।

মেহুর মা বলে--"কয়েকদিন এসে থেকে যা না?"

মেহু খুশি হয়।


মেহুর মা আবারো বলে--"তোর শাশুড়িকে ফোন টা দে? আমি বলছি যেন কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে পাঠায়।"


তারপর মেহু ফোন টা মেঘের মায়ের কাছে নিয়ে যায়।তারপর মেহুর মা সব বলে,মেঘের মা রাজি হয়।


মেহু মেঘকে কল করে জেনে নেয় খেয়েছে কিনা!তারপর নিজে খেতে বসে।মেঘ খায়নি বললে কেমন কেমন যেন লাগে।আর খেয়েছে বললে কেমন সস্থি আসে সে নিজেও জানেনা।এটা যেন অন্যরকম টান।


মেহু সহ মেঘের বাবা মা মেঘতা সবাই খেয়ে নেয়।বিকেলের দিকে মেঘতাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে।মেহু নিজেও একটু শুয়ে থাকে।


মেঘ আজকে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি এসেছে।এসে ই দেখে মেহু আর মেঘতা ঘুম।মেঘ তাদের না জাগিয়ে ই ফ্রেশ হতে চলে যায়।তারপর এসে মেহুর পাশে বসে।

বাইরে থেকে এসে মেঘের চোখেমুখে ক্লান্তি ভর করে।কিন্তু সেই ক্লান্তি  নিমিষে দূর হয়ে যায় যখন দেখে সেই মুখ।মায়াবি মুখ।


মেঘ মেহুর কপালে আস্তে করে চুমু দেয়।মেহু সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলে।আর তাড়াহুড়া করে বসে পড়ে।


মেঘ তখন সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

--"বাপরে কি হাল্কা ঘুম!হুট করে জেগে যায়।"


মেহু আগে ব্যপার টা বুঝার চেষ্টা করে।তারপর বলে--"কি করছিলেন?"

--"কখন?"

--"এই এখন".

--"কই কিছু না তো।"

--"আপনি কিছুই করেন নি?"

--"নাহ। দেখোনা আমি দাঁড়িয়ে আছি।"


মেহু জানে মেঘের সাথে কথায় পারা যাবে না।তাই মেহু চুপ করে থাকলো।মেঘ হাসে।বাচ্চাদের মতো করে মেয়েটা।অথচ সেই মেয়ে বাচ্চা সামলিয়ে রাখে।


মেহু বলে--"কি ভাবছেন?"

মেঘ ভ্রু কুঁচকে বলে--"ভাবছি আরকি আমার বউকে নিয়ে।"

--"কি ভাবেন?"

--"তাকে কিভাবে ভালবাসা যায় সেটা।"

--"কিরকম?"


মেঘ তখন দরজার দিকে তাকিয়ে বলে--"এখনি দেখাতে হবে?"


মেহু কিছুক্ষণ ভেবে বলে--"নাহ।"


মেঘ হাসে।মেহু তখন বলে--"আপনি যেমন সুন্দর আপনার হাসিটা ও অনেক সুন্দর।"


মেঘ তখন অবাকের সুরে বলে--"অবুক প্রেমে পড়ো যাওনি তো?

--"তাতে কি আমি আপনার বউ।একশ একবার প্রেমে পড়বো।কিন্তু অন্য মেয়েরা পড়লে সমস্যা।এত সুন্দর হাসি না জানি মেয়েরা প্রেমে পড়ে কিনা।"

--"তার মানে আমার বউটা আমাকে ভালবাসে?হিংসা করছে।"

--"মোটেই নাহ।"


মেহু একটু লজ্জা পায়।এমনি তে সে তাহুর মতো লাজুক নয়।কিন্তু এখন এত লজ্জা কেন পাচ্ছে নিজেও বুঝছে না।


কথা কাটিয়ে মেহু বলে--"চা বানিয়ে নিয়ে আসি হ্যা?

--"কিসের মধ্যে কি?ভেবেছিলাম রোমান্টিক কিছু শুনবো।"


মেহু হুহ বলে সেখান থেকে চলে যায়।মেঘ তখন চিৎকার স্বরে বলে--"জানি জানি আমি সব বুঝি তুমি আমাকে ভালবাসো।"


মেহু কিছুই বলেনা।

মেঘের আড়ালে গিয়ে চুপিসারে বলে--"হ্যা আমি আপনাকে ভালবাসি।প্রথম দিন থেকে ভালবাসি।যেদিন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি সেদিন থেকেই আমার ভালবাসার মানুষদের মাঝে আপনাকে ও ঠায় দিয়েছি।আপনার মায়া ও আমি ছাড়তে রাজি না।শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সাথে থাকবে এই বউ।"


মেহু তখন সকলের জন্য চা বানায়।মেঘতার পাশে মেঘ একটু বসে।মেঘতা ঘুম থেকে উঠে বসে চোখ কচলায়।

তারপর হাল্কা করে ডাকে--"মাম্মাম!"


মেঘ ভ্রু কুচকে তাকায়।মেঘতা আবারো বলে--"মাম্মাম।"


এটা মেঘতার অভ্যাস!ঘুম থেকে উঠে মাম্মাম মাম্মাম করে ডাকা।মেঘ তখন বলে উঠে--"বাবাইকে কি চোখে পড়ছে না?"


মেঘতা তখন বলে--"বাবাই কোলে করে নিয়ে যাও তো?"


মেঘ কোলে করে দাঁড়িয়ে পড়ে।

--"চলো এবার?"


মেঘতাকে কোলে নিয়ে মেঘ বের হয়।তারপর টেবিলে গিয়ে দুজনেই বসে।মেহু চা নিয়ে আসে।


--"মাম্মাম!"

মেহু তাকায়।

--"আমি আজকেও দাদাইয়ের সাথে ঘুরতে যাবো?"

--"না আজকে নয়।"


মেঘতা মন খারাপ করে।

--"বাইরে শীত পড়ছে ভীষণ।তোমার ঠান্ডা লাগবে।'


মেঘতা তখন মেঘের মায়ের কোলে বসে।

--"তাহলে আজকে আমি দাদুর সাথে ঘুমাবো?"


মেয়ের এসব অদ্ভুত চাহিদা মেহু একদম ই মানতে পারছে না।

--"না তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না।"

মেঘ তখন বলে--"মেঘতা যখন চাইছে ঘুমাক আম্মুর সাথে।"


মেহু আর কিছুই বলেনা।


সবার চা খাওয়া শেষে আড্ডা দেয়।মেঘের বাবা একটু কাজে বাইরে ছিল।তারপর উনি ফিরে আসলেই মেহু উনাকে ও চা দেয়।


মেঘের বাবা বলে--"এই একটা মানুষের চা আমার খুব প্রিয়।সেটা শুধু আমার বউমার চা।বাইরে এত চা পান করি কিছুতেই ভালো লাগে না।"


মেঘের মা বলে--"তোমার বউমা ভালবাসা আর মায়া মিশিয়ে চা বানায় তাই সকলের অতি প্রিয় মনে হয়।"


মেহু হাসে।মেঘ ও কিছু না বলে হাসে।


মেঘের বাবা মা মেঘতাকে নিয়ে গল্প করে।


মেহু রুমে যায় অনেক কাপড় আছে এখনো গোছানো হয়নি।মেহু কাপড় গুলো নিয়ে নিয়ে গোছানো শুরু করে।


মেঘ এসে পাশে বসে,

--"আচ্ছা বউ?"


মেহু ভ্রু নাচিয়ে বলে--"এখানে মেঘতা নেই।মেহু ও ডাকতে পারেন?"

--"বউ ডাকলে কি কষ্ট হয়?"

--"তা হবে কেন?আমার মনে হয় আপনি মেঘতার ভয়ে ডাকেন তাই?"

--"না তো আমি ভালবেসেই এই নামে ডাকি।"

--"আচ্ছা।"

--"বলছি একটু জড়িয়ে ধরি?"

--"এমন ভাবে বলছেন যেন আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে শুনে কাজ সব করেন?"


মেঘ আর কিছুই বলেনা।


--"আমি কাজ করছি জড়িয়ে ধরা যাবে না।"


মেঘ বলে--"তাহলে কাজ শেষে...."

--"হ্যা পারলে আলমারি তে ও সাজিয়ে রেখে চেয়ে থাকিয়েন।"

--"উহু এত কথা কেন বলো?"


মেহু মুচকি হাসে।মেঘ কি চাই মেহু জানে। তারপর ও এসব বলতে তার বেশ ভালো লাগে।

________


রাতের রান্নাবান্না মেঘের মা করে।মেহু ও পাশে দাড়িয়ে সাহায্য করে।তারপর খাবার টেবিলে রেখে মেহু সবাইকে ডেকে আনে।মেঘতাকে মেহু পাশে বসিয়ে খাওয়াচ্ছিলো।এতদিন মেঘতা খিচুড়ি খেত এখন সাদা ভাত আর মাংস খায়।

তবে ঝোল দিলে মেঘতা খেতে পারেনা।কিন্তু ঝাল খাওয়ার অভ্যাস তো করতে হবে নাকি।

এক লোকমা ভাত খাইয়ে দিতেই মেঘতার জিহ্বায় ঝাল লেগে যায়।চোখ ছলছল করে উঠে।


মেহু পানি পান করিয়ে ভাত গুলো নিজের জন্য রেখে দেয়।অনেক মানুষ আছে বাচ্চারা না খেলে ভাত তরকারি সব ফেলে দেয়।অথচ অপচয়কারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না।মেহু সেই দলে নিজের নাম লিখাতে পছন্দ করেনা।

.

মেহু মেঘতার জন্য আবার সাদা ভাত নিয়ে খাইয়ে দেয়।তারপর মেঘতাকে মেঘের মায়ের রুমে দিয়ে আসে।সবাই যে যার মতো খেয়ে উঠে যায়।


মেঘতাকে ঘুম পাড়িয়ে সে নিজের রুমে যায়।

মেহু শুয়ে পড়লে মেঘ ফিসফিস করে বলে --"ভালবাসি।"


মেহু হাসে।হেসে বলে--"ভালবাসবেন এই তো?"

____________________


মেহুকে মেঘ গ্রামের বাড়িতে দিয়ে আসে।কিছুদিন ওখানেই থাকবে।মেঘের অফিস আছে সে থাকবে না।দুপুরের খাবার খেয়ে মেঘ চলে আসে।মেহু খুব খুশি অনেকদিন পর বাবা মা কে একসাথে পেয়ে।


গ্রামের সবাই মেহু এসেছে সেটা শুনে দেখা করতে আসে।কেউ কেউ মেহুর পছন্দের খাবার ও নিয়ে আসে।কেউ কেউ ভর্তা নিয়ে আসে।


গ্রামের মানুষরা বিলের মধ্যে প্রায় মিষ্টি কুমড়া করেছে।মেহুর খুব প্রিয়।সব গুলো প্রতিবেশিদের।মেহু আসবে শুনেছে তাই প্রতিবেশি কেউ কেউ মিষ্টি কুমড়া ও এনে দিয়ে গেছে।

.

 মেঘতাকে ও সবাই আদর করে।মেহু খেয়াল করে তাদের উঠানে বিভিন্ন শাক সবুজ হয়ে আছে,আর কাঁচামরিচ গাছে সবুজ কাঁচামরিচ ।

মাকে ডেকে বলে--"আমার কাঁচামরিচ দিয়ে খুব শাক ভাজি খেতে মন চায়।"


মেহুর মা এতে সায় দেয়।

মেহু তখন বলে--"সেই আগের মত আমি শাক তুলবো।"


মেহু শাক তুলে,আর  মেঘতা পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।আর এটা সেটা জিজ্ঞেস করে।


প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে হয়রান হয়ে মেহু বলে--"এবার থামো।এত কথা কেমনে বলো?"


তখন মেহুর মা বলে--"এবার তোর বকবক আমি কেমনে সহ্য করতাম?হ্যা।মেঘতা যে তোর মতো হয়েছে।একদম বেশ হয়েছে।"


মেহু হাসে।তারপর বলে--"আপুর মত হলে চুপচাপ হতো।তাইনা আম্মু?"


মেহুর মা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বলে--"হ্যা।"


তারপর দুজনেই চুপ।অনেকদিন পর গ্রামে এসে মেহুর খুব আনন্দ লাগছে।আর মেঘতা নানার সাথে সেই আগের মতো গ্রাম ঘুরে বেড়ায়।

.


একদিন কেটে গেলে মেঘ কল করে,

--"বলুন?"

--"আমার কিছু ভাল লাগছেনা।কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগছে।চলে আসো না?"


মেহু চুপ করে থাকে।তারপর বলে--"আচ্ছা কয়েকদিন থেকে চলে আসবো।"

মেঘ খুশি হয়ে বলে উঠে--"ভালবাসি।"

--"জানি।"

--"তুমি ও ভালবাসি বলো?"


মেহু চুপ করে থাকে।

--"খুঁজে খুঁজে ভালবাসা নিতে হয়।সবই কপাল আফসোস করে লাভ নেই।"


মেঘের এমন কথায় মেহুর পেট ফেটে হাসি পায়।ভালই লাগে এসব শুনতে।

.


আরো একদিন কেটে গেলে মেঘের মা কল করে মন খারাপ নিয়ে বলে--"মেঘতা ছাড়া ঘর শূন্য শূন্য লাগছে।তারা যেন তাড়াতাড়ি চলে আসে।"


মেহু আসবে শুনে মেঘের মা খুব খুশি হয়।


তারপর মেহু তিনদিন থেকে বাবাকে নিয়ে চলে আসে।মেহুর বাবা মেহুকে দিয়ে,না থেকেই আবার গ্রামে চলে আসে।যেহেতু মেহুর মা ঘরে একা তাই।

.

.

কিছুদিন পর ই মেহু জানতে পারে মেঘতার খেলার সাথী আসতেছে।সবার খুশি দেখে কে?


মেঘের পাগলামির সীমা নেই।পাগলামি দেখতে দেখতে মেহু হাপিয়ে উঠছে।মেঘকে দেখে মনে হচ্ছে সেই একমাত্র বাবা হচ্ছে জিবনে,আর কেউ হয়নি.....

__________


অফিস থেকে এসে মেঘ ফ্রেশ হতে গেছে।নেট অন ছিলো।একটা কল আসলো।নাম সেইভ ছাড়া।মেহু পাশেই ছিল একবার তাকিয়ে রেখে দেয়।কিছুক্ষণ পর আবারো কল আসলে ও মেঘ বের হয়না।জরুরি ফোন ভেবে মেহু ফোন হাতে নেয়।


তাই মেহু কলটা রিসিভ করে সালাম দেয়।আর জিজ্ঞেস করে--" কে বলছেন?"

তখনি একজন মেয়েলি কণ্ঠস্বর ভেসে উঠে--" আমি মেঘের বউ বলছি......


চলবে..........

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post