অথৈ কলেজের মাঠে বসে আছে। কোথাও যাওয়ার নেই আজকে তার। তন্নিকেও বলে নি। ভেবেছিলো সাগরের সাথে আ/লাদা সময় কা/টাবে।

 #মায়াবতী #পর্ব:৪৭


অথৈ কলেজের মাঠে বসে আছে। কোথাও যাওয়ার নেই আজকে তার। তন্নিকেও বলে নি। ভেবেছিলো সাগরের সাথে আ/লাদা সময় কা/টাবে।

অথৈ কলেজের মাঠে বসে আছে। কোথাও যাওয়ার নেই আজকে তার। তন্নিকেও বলে নি। ভেবেছিলো সাগরের সাথে আ/লাদা সময় কা/টাবে।

সেখানে তন্নিকে রাখবে না। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে ভু/ল করেছে। কারণ সাগর তার কোনো খোঁ/জই নিচ্ছে না। নিশ্চয় তার সময় নেই। সে আসবে না। 

অথৈয়ের চোখে পানি চলে আসে। দুপুর গড়িয়ে গেছে। ঘড়ির কা/টায় চারটা ছুঁ/ই ছুঁ/ই। আর কতো অপেক্ষা করবে? সেই একটা থেকে এখানে এভাবে বসে আছে অথৈ। দুপুরের কড়া রোদ তার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। 

আজকে কলেজ বন্ধ থাকায় কেউ নেই কলেজে। এইদিকের রাস্তায় মানুষ জনও দেখা যাচ্ছে না। 

অথৈ উঠে দাঁড়ায়। মাথাটা ঘুরে যায়। দুই হাতে মা/থা চেপে চোখ ব/ন্ধ করে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। সকালে কিছু খায় নি। এখন বিকেল প্রায়। পেটে কিছু না থাকাতে মা/থাটা ঘু/রে গেছে। 

খানিকটা স্বাভাবিক হওয়ার পরে ব্যাগটা চেপে ধরে হাঁটতে শুরু করে। তখনই ফোন বে/জে ওঠে অথৈয়ের। 

ভেবেছিলো তন্নি কল দিয়েছে। কিন্তু ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে সাগর কল দিয়েছে। বরাবরের মতো হাসি ফুটে ওঠে না অথৈয়ের ঠোঁ/টে। ফোঁস করে শ্বাস টেনে কল রিসিভ করতে যায় তখনই কল কে/টে যায়।

মিসকল কেনো দিলো বুঝতে পারছে না অথৈ। ফোনে কি টাকা নেই? 

অথৈ কি কল ব্যাক করবে? 

অথৈ সাগরের নাম্বারে ডায়াল করতে যাবে তখনই মেসেজ আসে। তাতে লিখা ছিলো "মেইন রোডে আসো"

অথৈ বড়বড় পা ফেলে হাঁটতে থাকে। মেইন রোডে পা ফেলতেই দেখতে পায় সাগর বাইকে বসে আছে। মাথায় তার কালো হেলমেট। অথৈয়ের ঠোঁ/টের কোণে এবার হাসি ফুটে। সে এগিয়ে যায়। 

সাগরের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। সাগর একটা কুলফি আইসক্রিম অথৈয়ের দিকে বাড়িয়ে দেয়

"নাওওও এটা তোমার। খাও 

অপেক্ষা করালাম এতোখন


অথৈ মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

" আমি এটা খাবো না। 


সাগর ম/জা করে বলে


"এ বাবা কেনো খাবে না? যে গ/রম পড়েছে। খেয়ে নাও। 

অথৈ তাকায় না পর্যন্ত। সাগর আইসক্রিম তার বন্ধুর হাতে দিয়ে দেয়। 

তারপর হেলমেট খুলে চুল ঠিক করে তাকায় অথৈয়ের দিকে। বাইকের সামনে থাকা একটা শপিং ব্যাগ থেকে কিছু ফুল বের করে তা অথৈয়ের সামনে এগিয়ে দিয়ে বলে

" এটা তোমার জন্য। 


অথৈ খুশি আ/ত্ন/হারা হয়ে ফুলটা নিয়ে নেয়। 

"আমার জন্য এনেছেন? 

" নাহহহ

অন্য একটা মেয়ের জন্য এনেছিলাম কিন্তু দেখা হয়ে গেলো তোমার সাথে। তাই তোমাকে দিলাম। 


অথৈ ভেং/চি কা/টে। 

সাগর অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে বলে

"তুমি খুশি তো অথৈ? 

" আপনি আমার সাথে দুমিনিট কথা বললেই আমি খুশি হয়ে যাই। 

সাগর অথৈয়ের গাল টেনে দেয়। 

"বাসায় যাবে? না কি আমার সাথে ঘুরবে? 

অথৈ মাথা নিচু করে ফেলে ভারি ল'জ্জা লাগছে তার। কি বলবে সে? কিভাবে বলবে আপনার সাথে ঘুরতে যেতে চাচ্ছি? 

সাগরের বন্ধু দিপু বলে

" ও তোর সাথে ঘুরতে চাচ্ছে। যা ওকে নিয়ে। 

এই কথাতে আরও ল'জ্জা পেয়ে যায় অথৈ। সাগর হেসে ফেলে

"তাই না কি অথৈ? 

অথৈ পেছনে ঘুরে ফেলে। সাগর শব্দ করে হেসে ফেলে। 

" দিপু তাহলে বন্ধু যা তুই আজকে। কালকে কাজে যাবোনি। 


দিপু চলে যায়। সাগর মাথায় হেলমেট পড়ে নেয়। 

"ওঠো

অথৈ সাগরের কাঁ/ধে হাত রেখে উঠে বসে। আজকে তার খুশির দিন। আজকে সে ভীষণ খুশি। এতোটা খুশি লিখা ছিলো তার কপালে? এতোটাও সুখ ছিলো? 

" একটা কাপল পিক তুলবেন আমার সাথে?  কভার দিতাম। 


অথৈ রিনরিনিয়ে বলে। ভেবেছিলো সাগর শুনতে পায় নি। কিন্তু সাগর শুনে ফেলে৷ 

"ঠিক আছে। 

অবাকের ওপর অবাক হয়ে যায় অথৈ। মানুষটা এতো ভালো হয়ে গেছে? 

এরকম বার্থডে প্রতিদিন হলে ম/ন্দ হতো না। 


__

অফিস শে'ষে অফিসের ব্যাগ কাঁধে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাগর। বাবার জন্য দাঁড়িয়ে আছে সে। অনেক দিন বাবার সাথে আ/ড্ডা দেওয়া হয় না। দু'ষ্টু/মি করা হয় না। সারাদিনের ক্লা/ন্তি শে/ষে বাবার কাঁধে মাথা রেখে বাসায় ফেরে সে। কথা বলার এনা/র্জি থাকে না। আনোয়ার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে হ/তা/শ হয়৷ মাঝেমধ্যে বলে " বাবা তোমাকে আর অফিসে আসতে হবে না"

কিন্তু অর্ণব শোনে না। সে কাজ করবেই। 


আনোয়ার আজকে হিসেব শে/ষ করে বেরোবে বলে দেরি হচ্ছে। 

অর্ণব অফিসের পাশে বড় গাছটার নিচে বসে। বিকেলের ফুরফুরে হাওয়া বইছে। অর্ণবের ঘামে ভেজা শার্টটা শুকিয়ে দিচ্ছে। শরী/র শান্ত হয়ে যাচ্ছে। ভীষণ ভালো লাগছে। 

হঠাৎ অর্ণবের সামনে এসে দাঁড়ায় নিধি। অর্ণব নিধির মুখের দিকে তাকায়। জানা আছে অর্ণবের এখনই জিজ্ঞেস করবে "বিয়ে কবে করবে"

নিধি কিছু বলার আগেই অর্ণব বলে ওঠে

"তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে যে তোমার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিলো সেটা আমি এন্ড আমার পাপা দুজনই দেখে ফেলেছি। 


নিধি জানতো অর্ণব এটা বলবে৷ 

নিধি অর্ণবের পাশে বসে বলে

"দো/ষটা কি তোমার নয় অর্ণব? আমাদের একটা সুন্দর রিলেশন ছিলো। আমরা বিয়ে করবো ভাবছিলাম। তখন তুমি ওই গাইয়া ভু/ত নেকা বোকা তন্নিকে দেখে আমাকে ভুলে গেলে। নিজের মতামত পা/ল্টে ফেললে। 

আমায় ঠ/কালে। তুমি চরি/ত্রহীন অর্ণব। 


অর্ণব মুচকি হেসে বলে

"আমি চ/রি/ত্রহীন, সাগর প্রেমিক পুরুষ, আমার মায়াবতী নে/কা বো/কা আর গাইয়া, অথৈ সাহ/সী, আর তুমি ভালো মানুষ। এটাই তো জীবন নিধিরা নিধি। সবাই যদি একরকম হতো তাহলে মায়াবতী আর নিধিরা নিধির মধ্যে পার্থক্য বুঝবো কি করে? 


নিধি দাঁ/তে দাঁ/ত চে/পে তাকায় অর্ণবের দিকে।

" নিধি তুমি আমাকে অপশন হিসেবে রেখেছিলে। আমি যখন তোমায় নিয়ে ভেবে গেছি তখন তুমি আমাকে নিয়ে ভেবেছো?

তোমার জন্য শাড়ি কিনে আমার বোনকে সাথে নিয়ে তোমার সাথে দেখা পর্যন্ত করতে গিয়েছিলাম আমি। কিন্তু রাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে সবার গার্লফ্রেন্ডের পিক দিচ্ছিলো তখন দেখলাম সিহাবের গার্লফ্রেন্ড তুমি। 

ভীষণ খারাপ লেগেছিলো আমার। 

আমার মতো একটা ছেলেকে কেউ অপশন হিসেবে রাখতে পারে এটা জাস্ট ভাবতে পারি নি। 


নিধি কথা বলার ভাষা খুঁজে পায় না। সে এক সাথে অনেক গুলো রিলেশন কন্টিনিউ করতো তখন। অর্ণবের বন্ধুর সাথে রিলেশনশীপ এ গিয়েছে এটা সে জানতো না। 

সিহাব নিধিকে ছেড়েছে আরও অনেক আগে। এবং সিহাব এখন বিয়েও করে নিয়েছে। সিহাব ছেড়ে দেওয়ার পরে নিধি অর্ণবকে শক্ত করে আকড়ে ধরার চেষ্টা করেছে কিন্তু ততদিনে সব হাতের বাইরে চলে গেছে।


"জীবনে সুখে থাকতে বেশি কিছু লাগে না। একজন ভালোবাসার মানুষ হলেই হয়। কিন্তু তুমি সেই মানুষটা ছিলে না আমার জন্য। 

ভালো হয়ে যাও নিধি। বড় হয়েছো। বুঝতে শিখেছো। দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না। একজনকে সময় দাও। একজনকে নিয়ে থাকো। সুখী হবে তুমি। 

আল্লাহ তোমাকে অনেক ভালো রাখবে৷ 

কখনো কোনো দরকার হলে আমায় ডেকো। আমি যথা সাধ্য চেষ্টা করবো তোমাকে সাহায্য করতে। আফটার অল একটা সময় আমরা বেস্টফ্রেন্ড ছিলাম।


বলেই অর্ণব উঠে যায়। কথাগুলো সে কখনোই বলতে চায় নি নিধিকে। কিন্তু না বলেও উপায় ছিলো না। 

নিধি নামের মেয়েটার জন্য অর্ণব নামের ছেলেটার মনের কোথাও একটা একটুখানি খা/রা/প লাগা কাজ করে। 

আল্লাহ মেয়েটার হেদায়েত দান করুক। তাকে ভালো রাখুক। একটু ভালো মানুষ করে দিক। এটাই চায় অর্ণব। 


চলবে

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post